এমপিওভুক্তি দাবিতে আন্দোলন তিন মাস স্থগিত- শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক ॥ ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাস

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসে লাগাতার অনশনসহ সকল কর্মসূচী তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শুক্রবার মন্ত্রীর মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে এক বৈঠকের পর নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ এশারত আলী এই ঘোষণা দিয়েছেন। বেলা তিনটায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। অন্যদিকে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ এরাশত আলীর নেতৃত্বে সংগঠনের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা তাঁদের সব বিষয়েই কথা বলেছি। তাঁরাও আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা তিন মাস পরে আবার বসব এবং বিষয়গুলো পর্যালোচনা করব। এমন আলোচনার ভিত্তিতে তাঁরা কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন। আমি তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেছি। তাঁরা এখন বাড়ি ফিরে যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, প্রায় সাত হাজার প্রতিষ্ঠানের এমপিও করা নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে শিক্ষক নেতা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের পিপার স্প্রে নিক্ষেপ এবং ১২ দিন পরে কেন শিক্ষকদের বৈঠকে ডাকা হলো- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ এশারত আলী। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের একটি ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানাবেন। আমরা মনে করি, এমপিও নিয়ে সরকার আন্তরিক। তাই আমরা আমাদের কর্মসূচী তিন মাসের জন্য স্থগিত করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে সাত দিনের মধ্যে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করতে পারেন মন্তব্য করে এশারত আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়ে শিক্ষকদের আর রাজপথে নামতে হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিন মাসের মধ্যে আপনারা কি দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না তা নয়। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের প্রতিষ্ঠানের এমপিওর বিষয়টিকে একটি ইতিবাচক অবস্থানে নিয়ে যাবেন এবং আমাদের বিষয়টি জানাবেন। আমরা মনে করি সরকার আন্তরিক। এই অবস্থায় আমরা আন্দোলন তিন মাসের জন্য স্থগিত করছি। তিন মাস পর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে আন্দোলনের নতুন কর্সসূচী দেয়া হবে। এদিকে অনেক নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগঠনটির নেতারা। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এমনকি সাধারণ শিক্ষকরাও কয়েক নেতার বিরুদ্ধে এমপিওভুক্ত করিয়ে দেয়ার নাম করে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ এসেছে এই আন্দোলনের পেছনে সরকারবিরোধী একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মদদ আছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সভাপতি এশারত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এমনকি আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আমাদের বিষয়টি তুলতে পারলে তিনি নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন। মানবিক দিক থেকে হলেও তিনি দেখবেন। আমাদের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের কোন ইন্ধন নেই।
কয়েক শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে এমপিওভুক্ত করিয়ে দেয়ার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগও মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন সভাপতি এশারত আলী। বলেছেন, এটা মিথ্যা ও অপপ্রচার। এর আগে কয়েক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ এসেছে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছেও। দেশের যেখানে সেখানে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। এখন এসব নামসর্বস্ব সকল প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করে সরকারীভাবে বেতন দেয়ার দাবি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই অধিকাংশ শিক্ষককেই বেতন দেন না মাসের পর মাস। বরং মালিকরাই শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে বলেছেন, সরকার এমপিও না দিলে আপনাদের বেতনভাতা চালানো সম্ভব নয়। এমপিওর দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে বেশ কয়েক দিন ধরেই বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশী বাধার মধ্যেও শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চ এবং সংসদ ভবনের সামনে বিচ্ছিন্নভাবে কর্মসূচী পালন করেন।

No comments

Powered by Blogger.