যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতার কোন স্থান নেই নির্মূল কমিটির by সেমিনারে দীপু মনি

যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে নিরপেক্ষতার কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা জানোয়ারের সমান। জানোয়ারদের বিরুদ্ধে লড়তে যেমন নিরপেক্ষতা রাখা যায় না।
তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষতার কোন স্থান নেই। ২০১৩ সালকে গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের বিচার শুরু হয়েছে তাদের বিচারের রায় হবে এ বছরে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে দেশের তরুণ সমাজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে রায় দিয়েছে। এ বিচার চলবে কি চলবে না এবারের নির্বাচনে তা নির্ধারণ হবে। তিনি সচেতনভাবে দেশের তরুণ সমাজকে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।
শনিবার ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : ২০১৩ সাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে দীপু মনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে বিএনপি সরকার। এ মামলা নিয়ে তাঁকে ইহলোক ত্যাগ করতে হয়েছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। আজ পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনরকম হস্তক্ষেপ করা হয়নি। বাইরে থেকেও বিচার বন্ধে কেউ সরকারকে টলাতে পারবে না। তুরস্কের পক্ষ থেকেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারাই এ বিচার বন্ধে বাইরে থেকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে, তাদের সঙ্গে সরকার কোনদিন আপোস করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে চেতনা প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি থেকে অবসানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা প্রয়োজন। যারা এ বিচার বানচালের চেষ্টা করবে তাদের রাজনীতি থেকে বিদায় জানাতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে তারা স্বঘোষিত যুদ্ধাপরাধী। পাকিস্তানের দালাল। এরা ফতোয়া দিয়ে নারী নির্যাতনকে হালাল করেছে। এ বিচারে কোন নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না। দেশের মানুষের কাছে এরা কোন অপরিচিত ব্যক্তি নয়। এদের কর্মকা- সম্পর্কে দেশবাসী ভালভাবে অবগত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রহস্যজনক নিরবতার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বিচার বানচালের চেষ্টা করছেন। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারের কথা বলে বিচারের বিরোধিতা করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে তাঁর এ অবস্থান গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য দুঃখজনক। জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে চির বিদায় নিতে হবে। তিনি খালেদা জিয়াকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হয় জামায়াত ছাড়তে হবে, নয় রাজনীতি ছাড়তে হবে। এর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, একদিকে বিচার কাজ চলছে, অন্যদিকে বিরোধীপক্ষ প্রবল শক্তি নিয়ে বিচার বন্ধে বাধা প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সংসদে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল। আজ তারই সুযোগ নিয়ে বিচারের বিরোধিতা করছে। মামলা প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে জট বেঁধে গেছে। আইনবিদরা আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করে সময় ক্ষেপণ করছেন। বিচারের পক্ষে জনমতকেও সংগঠিত করা হয়নি। অথচ বিরোধীরা বিচার বন্ধে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবেও ১৪ দল এ বিষয়ে জনমতকে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানখিন যুদ্ধাপরাধীদের বিষকাঁটা উল্লেখ করে বলেন, যতদিন এ কাঁটা থাকবে ততদিন যন্ত্রণা থাকবে। এ বিষকাঁটা তুলে ফেলতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ শপথ নিতে হবে। তিনি বলেন, যাঁরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তাদের বিচার করতে হবে। দেশের মানুষ এ বিচার চাই। তাই সরকারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশ্বাসী।
লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা দিতে হবে। যার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিচার কাজ অব্যাহত রাখতে পারে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে হবে। কারণ ভোটার তালিকায় এক কোটি নতুন ভোটার যোগ হয়েছে। যাঁদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। এদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুললে আগামী নির্বাচনে বিচারের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর এদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তারও শ্বেতপত্র প্রকাশ ও বিচার করতে হবে। নির্বাচনের পর যারা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার করা না হলে প্রত্যেক নির্বাচনেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, যুদ্বাপরাধীদের বিচার বন্ধে বিরোধীপক্ষ প্রচুর টাকা ঢালছে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এ বিচার নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। সভাপতির বক্তব্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা কামাল লোহানী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়ায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.