হৃদরোগের চিকিসাপরবর্তী উপসর্গ রিস্টেনোসিসের সমাধানে নতুন দিগনত্ম

হৃদরোগের প্রতিকারে স্টেন্ট এ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে বাইপাস সার্জারি আজ স্বাস্থ্য সচেতনতার যুগে সবার কাছে পরিচিত নাম। কিন্তু ধমনীর অসুখের যথাযথ চিকিৎসার পরেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আনুমানিক শতকরা ১০ ভাগ রোগীর এক বা একাধিক স্টেন্টসহ ধমনীর রক্ত চলাচল আবার বাধাপ্রাপ্ত হয়।
হৃদরোগজনিত এই সমস্যাকে বলা হয় রিস্টেনোসিস বা ইন-স্টেন্ট রিস্টেনোসিস। বাংলাদেশের প্রবীন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মালিক বলেন, পৃথিবীব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি, বিশেষ করে ডায়াবেটিস মেলিটাস ও হৃদরোগের মতো মারণ ব্যাধির গবেষণাকে সর্বসময়ে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ও বর্তমানেও। বরং আরও বহুমুখী দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিকতর থেকে আধুনিকতম অবস্থানে নিয়ে যাবার অকানত্ম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর মতে, বর্তমান প্রযুক্তিগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে হৃদরোগের চিকিৎসায় বিজ্ঞান যতই আধুনিক হচ্ছে, আজকের আর্থ-সামাজিক বিবর্তনের ফলস্বরূপ সর্বসত্মরের মানুষের দৈনিক আশা-আকাঙ্ৰা সীমাহীন উর্ধগামী। কঠোর প্রতিযোগিতায় নিজেকে বিজয়ী প্রমাণ করার জন্য তাদের দৈনন্দিন জীবন মানসিক চাপে বিপর্যসত্ম। এই সামাজিক জটিলতা পরবতর্ী পর্যায়ে শারীরিক জটিলতা ও সমস্যায় পর্যবসিত হচ্ছে। তাঁদের শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা চিকিৎসকেরা সর্বৈবভাবে চিনত্মিত। জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য, প্রচ- ব্যসত্মতার মধ্যেও নিত্যনতুন জ্ঞানার্জনের কারণে চিকিৎসক সমাজ সর্বদা সচেষ্ট। আজকের হৃদরোগের চিকিৎসাপরবতর্ী জটিলতা যথা 'রিস্টেনোসিসের সহজ সমাধানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান' সংক্রানত্ম আলোচনাসভা তারই একটি অঙ্গ। এ ব্যাপারে ডা. মালিক উপস্থিত অতিথি বক্তা প্রফেসর ডা. ট্যান হুয়ে চিম'কে তাঁর অভিজ্ঞতা বিশদ বলার অনুরোধ করেন।
প্রফেসর ডা. ট্যান হুয়ে চিম বলেন, হৃদরোগীর যথাযথ চিকিৎসা হওয়া সত্ত্বেও হৃদযন্ত্রের রক্ত চলাচলকারী ধমনী আবার বাধাপ্রাপ্ত হওয়া সত্যই দুর্ভাগ্যজনক। একটাই ইতিবাচক কথা যে, এই অঘটন সামান্য কিছু ৰেত্রেই ঘটে। এই ধরনের সমস্যা আনত্মর্জাতিক সত্মরের তুলনায় বেশি আছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সাধারণ ধাতব স্টেন্টের পাশাপাশি ওষুধযুক্ত স্টেন্টের ব্যবহারে রিস্টেনোসিসের সংখ্যা ক্রমশ কমের দিকে। হৃদরোগজনিত সমস্যার গবেষকরা নানা পরীৰা-নিরীৰার পর রিস্টেনোসিসের চিকিৎসায় ওষুধ মাখানো বেলুন ও ক্যাথিটার (উৎঁম ঊষঁঃরহম ইধষষড়হ ্ ঈধঃযবঃধৎ) আবিষ্কার ও ফলপ্রসূ ব্যবহারে সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন ইউরোপীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যেই এই ওষুধসহ বেলুন ও ক্যাথিটার বিশ্ববাজারে পেঁৗছে গেছে এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা তা ব্যবহার করে রোগীকে সুস্থ করে তুলছেন।
ডা. ট্যান কর্মৰেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, রিস্টেনোসিস বা ইন-স্টেন্ট রিস্টেনোসিসের চিকিৎসায় ওষুধযুক্ত বেলুনের ব্যবহার খুবই সহজ ও সঙ্গে সুবিধাও ত্রিমুখী:
১) চিকিৎসা ব্যবহারবিধি মেনে চিকিৎসকরা পুনরায় রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত এক বা একাধিক রক্তবাহী ধমনীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
২) বাধাপ্রাপ্ত ধমনীকে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলের উপযোগী করা ছাড়াও কোন ৰত থাকলে তারও সম্ভাব্য চিকিৎসা হবে।
৩) হৃদযন্ত্রে রক্তবাহী শিরার একাধিক ছোট ছোট উপশিরা থাকে। সেসব জায়গাতেও চর্বি জমতে পারে। পাশাপাশি উপশিরার দেওয়ালগুলো দুর্বল হয়ে পড়তেই পারে। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সেসব এলাকায় আমরা চিকিৎসকরা স্টেন্ট বসাতে পারি না। কিন্তু এই নতুন ওষুধযুক্ত বেলুন ও ক্যাথিটারের ব্যবহারে সেসব দুর্গম স্থানে ওষুধ পেঁৗছে দিলে ধমনী এবং একাধিক উপ-ধমনীতে চর্বি জমার আশঙ্কা প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।
রিস্টেনোসিসের আশঙ্কা বন্ধ করতে প্রফেসর ডা. ট্যান হুয়ে চিম বলেন যে খরচে সম্ভব হলে স্টেন্ট এ্যাঞ্জিওপস্নাস্টির সঙ্গে সঙ্গে যদি ড্রাগ ইলু্যটেড বেলুন ক্যাথিটার ব্যবহার করা যায়। তবে বেশ কিছু ৰেত্রে স্টেন্ট, রক্তবাহী ধমনী ও উপ- ধমনীগুলোর সুরৰা মজবুত হয়। পুনরায় চর্বি জমা থেকেও রৰা পাওয়া সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.