ওয়ানডে সিরিজ- গ্যাবায় বোলারদের এক দিন

টস করতে গিয়ে দুই অধিনায়ক যখন ঐকমত্যে পৌঁছালেন, প্রথমে ব্যাটিংই করা উচিত; প্রকৃতি মনে হয় মুখ টিপে হাসছিল। উইকেট দেখে দুই অধিনায়কেরই মনে হয়েছে, এতে প্রচুর রান।
উইকেট হয়তো তা-ই ছিল, কিন্তু ব্রিসবেনের বাতাসের আর্দ্রতা যে সুইং বোলিং করার আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেটি কেউই বুঝতে পারেননি। দুই দল মিলিয়ে ১৪৯ রানে পড়ল ১৬ উইকেট! নিজেদের সর্বনিম্ন ওয়ানডে স্কোরের লজ্জার শঙ্কায় ভুগতে ভুগতে অস্ট্রেলিয়া অলআউট ৭৪ রানে। সেই মামুলি লক্ষ্যটা ছুঁতে ঘাম ছুটে গেল শ্রীলঙ্কার। জিতল মাত্র ৪ উইকেটে। শুরুতে তিলকরত্নে দিলশান আর লাহিরু থিরিমান্নের ক্যাচ দুটি না ফেললে সিরিজে ২-১-এ শ্রীলঙ্কার এগিয়ে যাওয়া হয়তো কঠিন হতো আরও।
গ্যাবার আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন নুয়ান কুলাসেকারা। ২২ রানে ৫ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং—এই তথ্যও বোঝাতে পারছে না ইনসুইং বোলিংয়ের কী দুর্দান্ত এক প্রদর্শনী মেলে ধরেছিলেন এই পেসার। মাইকেল ক্লার্ক আর ময়েজেস হেনরিকস বুঝেছেন সবচেয়ে ভালো। অফ স্টাম্পের প্রায় তিন ফুট বাইরে থেকে বল সাপের মতো ছোবল তুলে আঘাত হেনেছে স্টাম্পে। ক্লার্ক-হেনরিকস দুজনই ইনসুইং বুঝতে পেরেছিলেন। খেলেছেনও সেভাবে। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল ঢুকে গেছে ভেতরে। এই দুজন ফিরলেন কুলাসেকারার ষষ্ঠ ওভারের প্রথম তিন বলের মধ্যে। ৬ ওভার শেষে তাঁর বোলিং ফিগার: ৬-১-১৮-৫!
পরের ৪ ওভারে উইকেট পাননি লাসিথ মালিঙ্গা ভাগ বসিয়েছেন বলে। মালিঙ্গা নিজে অবশ্য নেমন্তন্ন বাড়িতে এসেছেন খাবারদাবার প্রায় যখন শেষ! ৩০ রান তুলতেই অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ফেলেছে ৬ উইকেট। সেখান থেকে টানা তিন ওভারে মিচেল জনসন, ম্যাথু ওয়েড আর ক্লিন্ট ম্যাকাইকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিলেন মালিঙ্গা। ৪০ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেট নেই। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর তখনো ৩০ রান দূরে।
এর পরই পরিস্থিতি বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য এক জুটি হলো। জেভিয়ার ডোহার্টি আর মিচেল স্টার্ক মিলে শেষ উইকেটে গড়লেন ৩৪ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে শুধু এই দুজনই দুই অঙ্ক ছুঁলেন। দুই অঙ্কের একমাত্র জুটিও এটিই। দুবার হেলমেটে বাউন্সারের আঘাতও সামলে নিলেন চোয়াল বেঁধে সত্তরের লজ্জা এড়ানোর প্রতিজ্ঞায় নামা স্টার্ক।
পাকিস্তান একবার ৮৭ রান করেও ম্যাচ জিতেছিল। প্রথমে ব্যাট করে সবচেয়ে কম রান করে জয়ের রেকর্ড এটাই। কিন্তু সেই ম্যাচটা নেমে এসেছিল ১৬ ওভারে। ৭৪ রান করে জেতা যায় না। কিন্তু বিশ্রাম শেষে এই ম্যাচে ওয়ার্নার-ওয়েডদের সঙ্গে নিয়ে দলে ফেরা নিয়মিত অধিনায়ক ক্লার্ক তাঁর বোলারদের কী মন্ত্র পড়ে দিয়েছিলেন কে জানে! নিজের অভিজ্ঞতায় পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন, কিন্তু জয়াবর্ধনেকে ফিরতে হয়েছে প্রথম ওভারেই। জীবন পেয়েও থিরিমান্নে বেশি দূর যেতে না পারলেও দিলশান শেষ পর্যন্ত ২২ রান করেছেন। ইনিংস-সর্বোচ্চ ২২ করেছেন কুশল পেরেরাও। অন্য পেরেরা থিসারাকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের বন্দরেও ভিড়িয়েছেন এই উইকেটরক্ষক।
পুরো দিনটার কথা ম্যাচ শেষে ক্লার্কের একটি বাক্যেই উঠে এসেছে: ‘আ হরিবল ডে!’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.