বিস্কুট খাওয়ার অপরাধে শিশুটিকে হত্যা করলো পাষণ্ডরা by তানভীর

না বলে বিস্কুট খেয়ে ফেলাটাই ছিল তার একমাত্র অপরাধ। শুধুমাত্র এ কারণেই নারায়ণগঞ্জে সুখী (১০) নামের এক শিশুকে দেওয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে ঠুকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতু হয়েছে সুখীর।

যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, প্রজাপতির মত বেসে বেড়ানোর কথা শিশুসুলভ আনন্দ-বিনোদনে— কিন্তু  তা তার ভাগ্যে জোটেনি। পরিবারের কঠিন দারিদ্র তাকে স্কুলে যেতে দেয়নি। ঠাঁই হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জামতলা এলাকায় এক ফ্ল্যাট বাসায় গৃহকর্মীর হিসেবে। সেখানেই কাজের ফাঁকে কাউকে না জানিয়ে শিশুসুলভ চপলতায় বিস্কুট খেয়ে ফেরেছিল কয়েকটি। বাড়িঘরের শিশু মাত্রই এমনটি করেই থাকে। কিন্তু সুখী ভূলে গিয়েছিল যে সে গৃহকর্মী— আরও মোটাদাগে বলতে গেলে ‘কাজের মেয়ে’। সুতরাং এই অপরাধ ক্ষমা করেনি মনিবের বাড়ির লোকজন। তারা তাকে মারধরের পর দেওয়ালে মাথা ঠুকে গুরুতর আহত করে। এ সময়ে তার আর্তচিৎকারেও মন গলেনি পাষণ্ডদের যাদের ঘরেও আছে এমন শিশু।

গুরুতর আহত সুখীকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে পরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনদিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে মঙ্গলবার বিকেলে মারা যায় সে।

নিহতের পরিবার নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে।

সুখীর মৃত্যুর খবরে পালিয়ে গেছে তার নির্যাতনকারীরা।

এ ঘটনায় সুখীর বাবা খোকন পাঠান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন।

খোকনের বরাত দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আবদুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, হতদরিদ্র খোকন গত ৫ ডিসেম্বর খোকন পাঠান ইউসুফ নামে এক দালালের মাধ্যমে তার মেয়ে সুখীকে শহরের ১২৩ নিউ চাষাড়া জামতলার বাসিন্দা কামালের বাড়িতে কাজে দেন। এর ৩ দিনের মাথায় ৮ ডিসেম্বর সুখী না বলে বিস্কুট খেয়ে ফেলায় বাড়ির লোকজন মিলে তাকে দেওয়ালে মাথা ঠুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে।

খোকন আরো জানান, মারাত্মকভাবে আহত সুখীকে চিকিৎসা না করিয়ে দালাল ইউসুফকে ডেকে এনে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। ইউসুফ শহরের খাঁনপুরে ফুফুর বাড়িতে তাকে রেখে আসে। ভাতিজীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করান ফুফু। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয় তাকে। খবর পেয়ে সুখীর বাবা হাসপাতালে গিয়ে মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এসময় সুখীর কাছ থেকে জানতে পারেন, না বলে বিস্কুট খাওয়ায় সাহেব ও বিবি সাহেব মিলে তাকে দেওয়ালে মাথা ঠুকে মারধর করেছে।

এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি বিদায় নেয় চাষাড়ার কামাল ও তার স্ত্রীর মত নির্মম মানুষদের দুনিয়া।

ওসি আরো জানান, ঘটনার পর থেকে কামাল ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক।

তানভীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

No comments

Powered by Blogger.