আদালতের বিজ্ঞ প্রবক্তাগণ ও রাজা ক্যান্যুটের পারিষদবর্গ by মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

এত জঞ্জাল! এত ঝঞ্ঝাট!
জনস্বার্থে সমাধান প্রার্থনা করেন
বিজ্ঞ অধিবক্তাগণ
ন্যায়াধীশ আদালতের কাছে।
সৃজনশীল আদালত
বিজ্ঞ অধিবক্তার নিবেদন শুনে
মাথা নেড়ে আজ্ঞা করেন
আদেশ, নির্দেশ, নিষেধাজ্ঞা
কারণ দর্শাও-

ফুটপাতে কেন হকার বসে?
রাস্তায় কেন লোকে আবর্জনা ফেলে?
আবাসন এলাকায় কেন
অফিস-হাসপাতাল?
বাজারে কেন জাটকা মাছ
পাওয়া যায়?
সড়ক দুর্ঘটনায় কেন এত প্রাণহানি?
নদীবক্ষে নৌযানে কেন এত দুর্ঘটনা?
রাস্তায় মোটরযানে কেন কালো ধোঁয়া ছাড়ে?
কেন রাস্তা জুড়ে নেতাভিনন্দন বন্ধ করা হবে না?
কেন যত্রতত্র জনসভা বন্ধ করা হবে না?
কেন ধর্মঘট লাগাতার বন্ধ করা হবে না?
প্রত্যেক গ্রামে কেন পাকা রাস্তা থাকবে না?
প্রত্যেক ঘরে কেন গ্যাস-বিদ্যুৎ থাকবে না?
কেন নদীখেকো ভূমিদস্যুদের ঢিট করা হবে না?
কেন কালোবাজারিদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে না?
নেতাদের বেতন-ভাতা বারবার বাড়লেও কেন
শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হবে না?
কেন শিশুশ্রমিকের সংজ্ঞা সর্বত্র এক হবে না?
স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের কেন সঠিক বর্ণনা থাকবে না?
স্কুলের মানে- বই কেন নিষিদ্ধ হবে না?
কোচিং স্কুল কেন বন্ধ হবে না?
কেন মাস্টারদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করা হবে না?
কেন সরকারি ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা হবে না?
কেন স্কুলের লাইব্রেরিতে যথেষ্ট বই থাকবে না?
কেন ল্যাবরেটরিতে যথেষ্ট সাজ-সরঞ্জাম থাকবে না?
কেন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা হবে না?
কেন সেশন জটের জন্য ছাত্রদের খেসারত দেওয়া হবে না?
কেন বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হবে?
কেন রাজনীতিকদের ঠিক সময়ে কাউন্সিল মিটিং হবে না?
কেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা হবে না?
কেন পদপ্রার্থী ও পদাসীনেরা সম্পত্তির হিসাব দেবে না?
কেন ক্যু-অভ্যাসকারীদের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে না?
কেন ক্যু-অভ্যাস চিরতরে বন্ধ করা হবে না?
কেন জেলাভিত্তিক স্থানীয় সরকার হবে না?
কেন অনগ্রসর জাতিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে না?
কেন সরকার সর্বত্র রাষ্ট্রভাষা চালু করবে না?

কেন? কেন? কেন?
কারণ দর্শাও!
কারণ দর্শাও!
কারণ দর্শাও!
কেন?

কেন কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হবে না?
ধর্মাবতার!
হুজুর।
আপনি আজ্ঞা করলেই-
(আদালত স্বগত) "হও' বললেই হয়ে যাবে?'
ধর্মাবতার! আপনি প্রসন্ন হউন!

রাজা ক্যান্যুটের পারিষদবর্গ
এমন কথা না কি বলেছিলেন-
'ইওর ম্যাজেস্টি!'
ভবদীয় মহিমা!
আপনার অশেষ গরিমা!
আপনার আদেশ সকলেই মান্য করে
নতশিরে।
হীনাদপি হীন ক্ষুদ্র
মানুষ প্রকৃতি সকলেই আপনার প্রজা
আপনি আজ্ঞা করলে
বিক্ষুব্ধ সমুদ্র শান্ত হয়।
হুজুর! পরীক্ষা করে দেখবেন?
সমুদ্রতীরে সিংহাসন আনতে আজ্ঞা হোক!
স্মিত হেসে রাজা আজ্ঞা করেন,
'সিংহাসন নয়, একটা চেয়ার
রাখ ওই তটে
ওই চেয়ারে বসেই আমি হুকুম দেব বটে।
হে সমুদ্র! তোমার ক্ষোভ দমন কর।'
পারিষদ সমস্বরে বলে,
'রাজাদেশ এখনই পালন কর!'
সমুদ্রের ঢেউ একটু পিছিয়ে গেলেই
পারিষদ সব মাথা নেড়ে নেড়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
পরক্ষণেই ঢেউ দ্বিগুণ গর্জন করে ফিরে আসে।
রাজার চেয়ারের' পরে আছড়ে পড়ার আগেই
সাবধানী রাজা চেয়ার ছেড়ে গাত্রোত্থান করেন।
এক লাফে ডাঙায় সরে দাঁড়ান।
রাজার প্রস্থান।
হতভম্ব সব পারিষদ
নতমস্তকে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে
মাটি খোঁড়ে-
মূক পারিষদরা কামনা করে-
'হে ধরণী! তুমি দ্বিধা হও!'

সেপ্টেম্বর ২০১০

No comments

Powered by Blogger.