স্বায়ত্তশাসনের সেই উদ্যোগ কেন হিমাগারে?- গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) চার যুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খবর ও অনুষ্ঠান প্রকাশ বা সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলসহ সব ধরনের গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা আলোচনার দাবি রাখে।
গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের সব শ্রেণী ও পেশার মানুষেরই কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান আছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানটির চার যুগ পূর্তি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করলেন, সেই বিটিভি কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি জনগণের করের পয়সায়ই পরিচালিত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিষ্ঠানটি সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেয়ে ক্ষমতাসীনদের মহিমা প্রচারেই বেশি ব্যস্ত। প্রতিবেশী ভারতের সরকারি প্রচারমাধ্যম দূরদর্শন ও আকাশবাণীর সঙ্গে তুলনা করলেই এর দৃষ্টিভঙ্গিগত ফারাকটি স্পষ্ট হবে।
সরকারি প্রচারমাধ্যম হিসেবে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে ক্ষমতাসীনেরা বরাবরই খেয়ালখুশিমতো চালিয়ে আসছেন। ফলে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দুটি গণমাধ্যমের দর্শক-শ্রোতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। একসময় বিটিভি ‘সাহেব বিবি গোলামের বাক্স’ হিসেবে বদনাম কুড়িয়েছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা তার চেয়েও খারাপ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি যদি শ্রোতা-দর্শকদের আকৃষ্টই করতে না পারে, তাহলে জনগণের অর্থে এই দুটি প্রতিষ্ঠান রাখারই বা কী প্রয়োজন?
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার লক্ষ্যে মহা শোরগোল তোলা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে তারা বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছে। সাবেক সচিব আসাফ্উদ্দৌলাহ্র নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশও হিমাগারে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিও চালু হওয়ার পর বিটিভি বা বাংলাদেশ বেতারের স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে, তা ভাবার কারণ নেই।
বিটিভিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু সরকারি গণমাধ্যম পরিচালনায় সরকারের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে এসব সদুপদেশ যে কোনো কাজে আসবে না, তা হলফ করেই বলা যায়।

No comments

Powered by Blogger.