দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণ-চিকিৎসার জন্য তরুণীকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো

নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় বুধবার তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (ইনটেনসিভ কেয়ার) রাখা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ওই তরুণীকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তাঁর তিন দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁর দেহে সংক্রমণ সামলাতে হিমশিম খান চিকিৎসকরা। এদিন সকালেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিল্লির জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বিডি আথানি সাংবাদিকদের জানান, মেয়েটির অন্ত্রে গুরুতর জখম হয়েছে। তার শরীরে অন্ত্র প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
তরুণীকে নিয়ে একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স বিমানবন্দর থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে আইসিইউ সুবিধাও ছিল। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। চিকিৎসায় অনেক দিন লাগতে পারে_এই বিবেচনায় মা-বাবাও সঙ্গে গেছেন।
সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে গতকাল বলা হয়, মেয়েটিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মুখপাত্র গতকাল বলেন, 'রোগীকে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আনা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আমরা আশা করব, রোগী ও তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টির প্রতি সবাই সম্মান দেখাবে।'
কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, তরুণীটির অবস্থা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সেরে উঠতে তাঁর বেশ কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ জানান, তরুণীর সংকট এখনো কাটেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশিল কুমার সিন্দে বলেন, 'চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের চিকিৎসকদের সঙ্গে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।'
২৩ বছর বয়সী ফিজিওথেরাপির ওই শিক্ষার্থী গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে ছয় মদ্যপের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে পেটায়। পরে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। পার্লামেন্টেও এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। সরকার ঘটনা তদন্তে বিশেষ কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
ময়নাতদন্ত : পুলিশ সদস্যের মৃত্যু আঘাতে
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য সুভাস চাঁদ তোমরের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুরুতর আঘাতের কারণেই সুভাসের মৃত্যু হয়েছে। নাকে ও বুকে আঘাতের কারণে তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যান তিনি। লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের (এলএইচএমসি) ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাঁর ময়নাতদন্ত করেন। কয়েকদিন ধরেই তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল। পুলিশ দাবি করেছিল, আঘাতের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর তাঁকে দিল্লিতে যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেই রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে (আরএমএল) হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুদিন পর মারা যান সুভাস।
পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকবে : রাজধানী নয়াদিল্লির পুলিশের নিয়ন্ত্রণ দিল্লি রাজ্য সরকারের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার জানিয়েছে, রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকবে। এর আগে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিক্ষিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম সাংবাদিকদের বলেন, 'রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকা উচিত। বিশ্বের বেশির ভাগ রাজধানীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম বহাল আছে।' চিদাম্বরম জানান, বিষয়টি নিয়ে এখন বিতর্কের সময় নয়। 'আমাদের এখন দিল্লির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভবিষ্যতের বিতর্কের জন্য তুলে রাখা যাক।' তিনি জানান, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালেও এ বিষয়ে আলোচনা উঠেছিল। সে সময় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাঁর সময় দিল্লিতে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.