চৈতন্যের মুক্ত বাতায়ন-আলোয় ভরা মফস্বল by যতীন সরকার

দীর্ঘ দেড় বছর ফাটকে আটক থাকার পর সাতাত্তরের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেলাম। কিন্তু মনে হলো যে একটি ছোট কারাগার থেকে বড় একটি কারাগারে এসে প্রবেশ করলাম। দম বন্ধ করা স্বৈরশাসন-কবলিত দেশটিকে 'কারাগার' ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে?


তবু ছোট কারাগারে বসে থেকেও যেমন নিকষ আঁধারে আলোর রেখা দেখতে পেয়েছিলাম, বড় কারাগারে এসেও আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পেয়ে অনেক স্বস্তি পেলাম, এবং আলো দিয়ে আলো জ্বালানোর দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য যে কিছু কিছু মানুষ এগিয়ে আসবে- এমন সম্ভাবনারও আঁচ পেলাম।
মফস্বলে অর্থাৎ একেবারে গাঁওগ্রামে আমার জন্ম, বেড়েও উঠেছি মফস্বলে, এবং পরিণত বয়সেও মফস্বল শহরে আমার অধিবাস। চলি্লশ বছরেরও বেশি সময়, কলেজে অধ্যাপনার সূত্রে, জেলা শহর ময়মনসিংহে বাস করেই বেশ কিছু মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ও সামাজিক দায়িত্বচেতন মানুষের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সানন্দে এঁদের কয়েকজনেরই পরিচয় আমি এখানে তুলে ধরছি।
জেলখানা থেকে বেরিয়ে যেদিন ময়মনসিংহ শহরের পণ্ডিতপাড়ায় আমার ভাড়াটে বাসায় পা দিলাম, সেদিনই দেখা পেয়ে গেলাম একজন আলোকিত মানুষের। সেই মানুষটির নাম মোজাফফর হোসেন। নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যে আমার পাঠকরা মানুষটিকে চিনে ফেলবেন, তেমন কথা বলতে পারি না। তবে রাজধানী নগরীতে এবং দেশের অন্যত্রও যাঁরা তাঁর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা মোজাফফর হোসেন নামটি শোনামাত্র স্মৃতিতাড়িত হয়ে উঠবেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি যখন ঢাকাবাসী হয়েছিলেন, তখন আজিজ সুপার মার্কেটে অবস্থিত 'বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ'-এর সঙ্গে তাঁর সংযুক্তি ঘটে এবং একসময় তিনি মুক্তবুদ্ধিচর্চার এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পদেও বৃত হন। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমৃত্যু তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে 'বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ'-এর যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সে কথা পরিষদের সংশ্লিষ্ট সবাই বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন।
যাক, আমি স্মরণ করছিলাম ময়মনসিংহে আমার সঙ্গে মোজাফফর হোসেনের প্রথম সাক্ষাৎ ও পরিচয়ের কথা। আমার নাম হয়তো তিনি আগেই শুনে থাকবেন। তাই দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে বদলি হয়ে যেদিন ময়মনসিংহে এলেন, সেদিনই বিকেলে আমার আস্তানায় তাঁর পদার্পণ। জেল থেকে আমার বের হয়ে আসা এবং দিনাজপুর থেকে মোজাফফর সাহেবের এই শহরে আসা- কাকতালীয়ভাবে এই দুটি ঘটনাই ঘটে গিয়েছিল একই দিনে।
প্রথম পরিচয়েই আমি বিস্মিত ও বিমুগ্ধ হয়ে গেলাম। এককথায় যাঁদের 'সজ্জন' বলা যায়, এমন মানুষ কখনো গণ্ডায় গণ্ডায় মেলে না। মোজাফফর সাহেবের সঙ্গে দু-চারটি কথা বলেই আমি তাঁকে সজ্জন বলে চিনে নিয়েছিলাম। এরপর ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে একই শহরে একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাটিয়েছি। বুঝতে পেরেছি : শুধু সজ্জন নন, তিনি সুশীল সুবুদ্ধি সুবিদ্বান সুরসিক। দর্শনের অধ্যাপক ও সর্বদা বিভিন্ন বিষয়ক বিদ্যার অনুশীলনে রত এই মানুষটির মধ্যে রসজ্ঞতা ও রসিকতার চমৎকার সম্মিলন ঘটেছিল।
সে সময় ময়মনসিংহ শহরে যে কয়জন প্রগতিচেতন গুণীজনের অবস্থান ছিল, তাঁদের মধ্যে প্রধানতম বলা যেতে পারে আমার সহকর্মী অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শীকে। ১৯৬৮ সালে তিনি নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। সেই থেকেই তিনি আমার সহকর্মী ও সহমর্মী। আলিয়া মাদ্রাসার 'মোমতাজুল মোহাদ্দেসিন' পরীক্ষায় তিনি স্বর্ণপদক পান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও এমএ পাস করেন। ইসলামী শাস্ত্রে ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। যুক্তিবাদীর দৃষ্টি দিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় পরিবেশিত তাঁর চমৎকার আলোচনা শুনে সবাই অভিভূত হয়ে যেতেন, কট্টর বিপরীত মতাবলম্বীরাও তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পেতেন না।
মাদ্রাসার শিক্ষায় কৃতবিদ্য এই মানুষটি জীবনের একপর্যায়ে যান্ত্রিক বস্তুবাদী হয়ে উঠেছিলেন কেমন করে, এর কারণ-পরম্পরা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। তবে তাঁর মননে সর্বদা 'চরৈবেতি'র চেতনা ক্রিয়াশীল থাকাই এর আসল কারণ বলে আমার মনে হয়। জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত 'কেবলই এগিয়ে চলা'র প্রত্যয়কে তাঁর চৈতন্যে ধারণ করেছিলেন। কোনো কিছুতেই পিছু হটে যাওয়ার ভাবনা তাঁর ধাতেই ছিল না।
আমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে 'দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন'-এর অনুসারী জেনে তিনি আমার ওপর মোটেই খুশি হতে পারলেন না। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ তথা মার্ক্সবাদ যেকোনো ধর্মতন্ত্রের মতোই একটি 'ডগমা', ধর্মতন্ত্রের ডগমা তিনি পরিত্যাগ করে এসেছেন, তাই মার্ক্সবাদের মতো অন্য যেকোনো ডগমাকেই তিনি কাছে ঘেঁষতে দেন না- সে সময় এ রকম বক্তব্যই সামদানী সাহেব অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলে যেতেন। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁর প্রচুর তর্কবিতর্ক হতো। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের পক্ষ সমর্থনে তর্কে যোগ দিতেন দর্শনের অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর মোস্তফা হামিদ হোসেন এবং এ রকম আরো কয়েকজন। সামদানী সাহেব অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর যুক্তিবাদী ছিলেন বলেই যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে তিনি অনায়াসে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারতেন, গোঁড়ামিকে আঁকড়ে ধরে থাকতেন না।
তাই অল্পদিনের চিন্তা ও চর্চায়ই তিনি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শনের মর্মবাণীটি আয়ত্ত করে ফেললেন। এই দর্শনটি যে 'মানবচিন্তা ও সংস্কৃতির দুই সহস্রাধিক বছরের বিকাশের মধ্যে যা কিছু মূল্যবান ছিল তাকে আত্মস্থ করেছে ও ঢেলে সাজিয়েছে'- এই লেনিনীয় প্রত্যয়ে তিনি স্থিত হলেন। মানব-মনীষার যেসব অবদানের সঙ্গে এর আগে তাঁর পরিচয় ঘটেছিল, সেসবেরই যৌক্তিক পরিণতি তিনি দেখতে পেলেন মার্ক্সীয় দর্শনে। এ দর্শনটিকে আপন চৈতন্যে সংলগ্ন করে নেওয়ার পর থেকে, স্বভাবতই, তাঁর চিন্তাচেতনা অন্য রকম হয়ে গেল। যেসব তত্ত্বদর্শনের ধারাবাহিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আপন ভাবনার জগৎটিকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেসবের প্রতিও তিনি অবজ্ঞা প্রকাশ করতেন না। এ সময় সামদানী সাহেব তাঁর উপলব্ধির প্রকাশ ঘটাতেন এভাবে-
'আমার গুরু সাতজন। প্রথম গুরু সক্রেটিস, দ্বিতীয় গুরু শ্রীকৃষ্ণ, তৃতীয় শুরু গৌতম বুদ্ধ, চতুর্থ গুরু যিশুখ্রিস্ট, পঞ্চম গুরু মহানবী মুহাম্মদ, ষষ্ঠ গুরু কার্ল মার্ক্স ও সপ্তম গুরু আমার পিতা।'
যাঁকে তিনি সপ্তম গুরু বলতেন, আসলে সেই পিতাই তাঁর প্রথম গুরু। তাঁর পিতা ছিলেন উত্তর ভারতের দেওবন্দে শিক্ষাপ্রাপ্ত লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ। পিতাই পুত্রের মুক্তচিন্তার ভিত্তিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই ভিত্তির ওপরই পুত্র আপন প্রয়াসে তাঁর জীবনদর্শনের সৌধটি গড়ে তুলেছিলেন।
বলতে গেলে, সামদানীর নেতৃত্বেই আমরা ময়মনসিংহ শহরে র‌্যাডিক্যাল চিন্তাচর্চার একটা বৃহৎ মঞ্চ গড়ে তুললাম। একটা না বলে বলা উচিত, অনেকগুলো মঞ্চ গঠনেই আমরা অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম, পূর্ব থেকেই কার্যরত কোনো কোনো সংগঠনের কাজে গতিসঞ্চারের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংযুক্তি ছিল। উনিশ শতক থেকেই ময়মনসিংহ শহরে চিন্তাচর্চা ও সংস্কৃতি-আন্দোলনের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছিল, এ কাল অবধি তার ধারাবাহিকতা মোটামুটি বজায় আছে। কেবল কখনো তাতে অনেক বেশি গতি সঞ্চারিত হয়েছে, কখনো তা কিছুটা সন্দীভূত হয়েছে।
পাকিস্তান জমানায়, বিশেষ করে ষাটের দশকে, এ শহরে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন খুবই জোরদার হয়ে উঠেছিল। সে সময় এখানকার একঝাঁক তরুণ 'বাংলা ভাষা প্রচার অভিযান', 'সুন্দরম্', 'আমরা সমুদ্রমুখি'- এ রকম নানা সংগঠনের মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিল, এবং সেই সঙ্গে মার্ক্সীয় দর্শনচিন্তার অনুশীলনেও মনোযোগ দিয়েছিল। নুরুল আনোয়ার, আলোকময় নাহা, সুমিতা হোমরায়- এঁদের প্রযত্নে তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্রসংগীতের যথার্থ সমঝদার হয়ে ওঠে, কর্তৃপক্ষীয় বাধার মুখেও সমারোহের সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তীসহ ঋতু উৎসবগুলো পালিত হতে থাকে। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের হাতে খণ্ডীকৃত নজরুলের অখণ্ড রূপটির অন্বেষণে তরুণ সংস্কৃতিসেবীদের আন্তরিকতাদীপ্ত তৎপরতা দেখা দেয়।
এসবের ভেতর দিয়েই পাকিস্তানি শাসন-ত্রাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাঙালি তার সত্তাগত স্বকীয়তা রক্ষার জন্য প্রতিরোধ-চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে সে আন্দোলন যে দেশের সব স্থানে সমান গতিবেগে চলেনি, গ্রামবাংলা তো বটেই, কিছু কিছু মফস্বল শহরও যে আন্দোলন-প্রবাহের বাইরে থেকে যায়- সে কথাও স্বীকার্য বটে। তবে চিত্রের অন্য দিকও আছে, সে দিকটিতেও নজর দেওয়া দরকার। মফস্বলের অনেক এলাকারই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি এখানে কেবল আমার নিজের দেখা ময়মনসিংহ শহরের প্রতিই সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম। ময়মনসিংহের বুদ্ধিজীবীরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চলতে চলতেই রাজনীতি-সচেতন হয়ে ওঠেন, পাক জমানার শেষ পর্যায়ে গড়ে তোলেন 'বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম শিবির'। স্বাধীনতার পর অনেকের ইচ্ছায় 'সংগ্রাম' শব্দটি বাদ দিয়ে 'বুদ্ধিজীবী শিবির' নাম ধারণ করেও এটি অবশ্য বেশিদিন টিকে থাকল না। 'বুদ্ধিজীবী'দের অনেকেই কেটে পড়লেন, কেউ কেউ নানা ধান্দাবাজির পথ ধরে আপন আপন আখের গুছিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
তবু, এর পরও, এ শহরে মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবাহ রুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সে প্রবাহ হয়েছিল দুকূলপ্লাবী। বিগত শতকের শেষ এবং বর্তমান শতকেরও পাঁচ বা সাত বছর অবধি এ শহরে যে ধরনের বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলেছিল, গুণে-মানে, উৎকর্ষে ও মৌলিকতায় তাকে বলতে হবে অতুলনীয় রাজধানী নগরীর সঙ্গে তুলনায়ও যে অতুলনীয়- এমন কথা বলে ফেলতেও আমি কুণ্ঠিত নই। হয়তো আমার এ বক্তব্য একান্ত স্পর্ধিত বলে মনে হতে পারে, আঞ্চলিক সংকীর্ণতায় আবিষ্ট অনুদারচিত্ত মানুষ বলেও কেউ আমাকে চিহ্নিত করতে পারেন। তবু সব অভিযোগ ও নিন্দাবাচন শিরোধার্য করে নিয়েই আমি বলব : দেশের বিভিন্ন মফস্বল শহরে- এমনকি গ্রামগঞ্জেও- বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন যেসব গুণীজন, তাঁদের অবদান কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজধানী নগরীর চেয়েও অনেক বেশি উৎকর্ষমণ্ডিত। অথচ যেসব আলোচনা আমরা সাধারণত পত্রপত্রিকা ও বইপুস্তকে পড়ে থাকি, সেসবের ভেতর ওইসব গুণীজনের কৃতির কিংবা মফস্বলে অনুষ্ঠিত গ্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের তেমন কোনো স্বীকৃতি দেখতে পাই না। এভাবেও যে আমরা ইতিহাসের খণ্ডায়ন ও বিকারায়ণ ঘটিয়ে থাকি, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না। অবিলম্বে এই খণ্ডিত ও বিকৃত ইতিহাসের বদলে অখণ্ড ও প্রকৃত ইতিহাস রচনার উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। আর তারই জন্য প্রয়োজন সারা দেশের মফস্বল এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে অখ্যাত অথচ যথার্থ গুণীজনের পরিচয় উদ্ঘাটন করা, এবং তাঁদেরই প্রণোদনায় অনুষ্ঠিত নানা আন্দোলনের খবরাখবরের সংযুক্তি ঘটিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পূর্ণতা সাধন করা।
জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসেই দেখলাম, ময়মনসিংহ শহরে বেশ কিছু টগবগে তরুণ বিরূপ পরিবেশের বিরূপতাকে জয় করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সামাজিক অত্যাচার, রাজনৈতিক পীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ- এসব কোনো কিছুকেই তারা মুখ বুজে মেনে নেবে না, এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞাই যেন তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠতে দেখলাম। এই তরুণরা অনেক সংগঠনের সঙ্গেই নিজেদের সংযুক্ত করেছিল। তবে আশির দশকের গোড়ায় তারা নিজেরাই গঠন করে 'মুক্তবাতায়ন পাঠচক্র'। এই পাঠচক্রটির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের চিন্তাচেতনাকে অগ্রসর করে নিতে মোজাফফর ও সামদানীসহ অনেক প্রবীণ বুদ্ধিজীবীর ভূমিকার কথাই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করতে হয়। যেমন- ডক্টর মোস্তফা হামিদ হোসেন, ডক্টর আবদুল ওয়াদুদ মিঞা, ডক্টর আবদুস সাত্তার মণ্ডল। বিশেষ করে স্মরণ করতে হয় খগেশ কিরণ তালুকদারের কথা। বয়সের বিচারে খগেশের অবস্থান তখন তরুণ ও প্রবীণদের মাঝামাঝি। খগেশ প্রচুর পড়াশোনা করত, সে বাংলার সমাজ-জীবনের প্রতিটি বাঁককে অত্যন্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে চলছিল, এবং অন্যদেরও সে পর্যবেক্ষণে তার সঙ্গে নিয়েছিল।
মুক্তবাতায়ন পাঠচক্রের সদর্থক ও সুদূরপ্রসারী অবদানের স্বরূপ তুলে ধরা অল্প কথায় সম্ভব নয়। পরে এ নিয়ে আরো বিস্তৃত আলোচনা ও বিশ্লেষণের ইচ্ছা রইল।
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক

No comments

Powered by Blogger.