বাজার সহনীয় রাখতে ১২শ’ কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে টিসিবি-ব্যাংকে টাকা জমা রেখে চিনি ভোজ্যতেল মসুর ডাল ছোলা ও খেজুর কেনা হবে by মিজান চৌধুরী

বাজার সহনীয় রাখতে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে ১২শ’ কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে টিসিবি। রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ওই অর্থ ব্যাংকে রেখে পণ্য ক্রয় ও আমদানির আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো টিসিবির এক পত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।


অবশ্য আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্য দিবসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাংক গ্যারান্টি চেয়ে চিঠি দেয়া হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে।
টিসিবি জানিয়েছে, এই টাকা ব্যাংকে জমা রেখে চলতি অর্থবছরে ৪শ’ ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৫শ’ ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার টন ভোজ্যতেল, প্রায় ১শ’ ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার টন মসুর ডাল, সাড়ে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২ হাজার মেট্রিক টন ছোলা ও ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় হাজার মেট্রিক টন খেজুর ক্রয় করা হবে।
অবশ্য প্রতিমেট্রিক টন চিনির আমদানি মূল্য ৬০ হাজার ৫৭২ টাকা, ভোজ্যতেলের মূল্য ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, মসুর ডাল ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ছোলা ৫২ হাজার টাকা ও খেজুরের দাম ঠিক করা হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। ওই হিসাবে এসব পণ্য ক্রয় করতে টিসিবির ব্যয় হবে ১২শ’ ১১ কোটি টাকা।
বাজার সহনীয় রাখতে স্থানীয়ভাবে পণ্য সংগ্রহ ও বিদেশ থেকে আমদানির জন্য ওই ব্যাংক গ্যারান্টির প্রয়োজনিয়তা তুলে ধরা হয়। টিসিবির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে এলটিআর নিয়ে পণ্য আমদানির কারণে টিসিবির লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। কারণ ওই সুদে পণ্য ক্রয়ের পর দাম বৃদ্ধি পায়। অপর দিকে ভর্তুকি বেশি পরিমাণ দিয়ে বাজার মূল্য থেকে কমে বিক্রি করতে হয়। চিঠিতে আরও বলা হয় সরকার এই অর্থ দিলে ব্যাংকে গ্যারান্টি হিসেবে জমা রেখে এলটিআরের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করা যাবে। এতে ব্যাংকের সুদ গুনতে হবে না।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা চিঠি দিব। ইতোপূর্বে অর্থ মন্ত্রণালয় এক হাজার কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো গ্যারান্টি ব্যবহার করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এলসি খোলা গেলেও সুদ থেকে রক্ষা নেই। এ জন্য একটি তহবিল আকারে গ্যারান্টি প্রদান করা হলে এটি পণ্য ক্রয়ের সময় টিসিবিকে সুদ গুনতে হবে না। সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, অর্থের অভাবে টিসিবি ঠিক মতো প্রস্তুতি নিতে পারছে না। এ বছরও অপ্রতুল প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে টিসিবি। যা রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণে তেমন ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। কারণ ১০ হাজার ৮৭৭ মেট্রিক টন চিনি, ৪ হাজার ৩৭২ টন সয়াবিন ও এক হাজার ৩১৯ টন মসুর ডাল এবং এক হাজার টন ছোলা নিয়ে গত শনিবার থেকে টিসিবি বিক্রয় কর্মসূচী শুরু করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, রোজায় চিনির চাহিদা হচ্ছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টন, ভোজ্যতেল ১ লাখ ৭৫ হাজার টন, মসুর ডাল ৫০ হাজার টন ও ছোলা ২৫ হাজার টন। চাহিদা ও টিসিবির মজুদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রোজার ৩০ দিনের মধ্যে ১ থেকে ২ দিনের চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য মজুদ রয়েছে টিসিবির হাতে।
রোজা উপলক্ষে বড় ধরনের ভূমিকা না থাকায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। রোজা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতাও বাড়ছে। টিসিবির স্বল্প পণ্য বিতরণ দাম নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না। টিসিবি ৫০ টাকা কেজি চিনি বিক্রির পরও বাজারে কেজিতে এক টাকা বেড়ে ৫৩ টাকা থেকে ৫৪ টাকায় উঠেছে চিনির দাম। মসুর ডাল ও ছোলার মূল্য বেড়েই আছে।
জানা গেছে, টিসিবিকে শক্তিশালী করতে বর্তমান সরকার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে খুব বেশি শক্তিশালী করা হয়নি। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। ২০১১-১২ অর্থবছরে টিসিবিকে শক্তিশালী করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫শ’ কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হয়। কিন্তু ওই বছর তহবিল না দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার একটি ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়। ওই গ্যারান্টির মাধ্যমে রোজা উপলক্ষে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করা হয়েছে।
সর্বশেষ চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে টিসিবিকে শক্তিশালী করতে কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। যদিও ৩শ’ কোটি টাকার আলাদা একটি থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিসিবির এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু টিসিবিকে বর্তমানে যেভাবে চালানো হচ্ছে এতে খুব বেশি ভাল ফল পাওয়া সম্ভব নয়। এখন সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সিন্ডিকেটের কাছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকেলে টিসিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.