সিরাজগঞ্জের ৪শ’ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র-সাশ্রয়ী বিদ্যুত উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতা by রশিদ মামুন

সিরাজগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। প্রায় সাত মাস ধরে চলা দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আকস্মিকভাবেই নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি পিপিপিভিত্তিক প্রকল্প বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুত বিভাগে চিঠি দিয়েছে।


অর্থের সংস্থান না থাকলেও একই স্থানে আরেকটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে কোম্পানিটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের প্রকল্পটিতে নিজস্ব বিনিয়োগের চিন্তাভাবনাও নেই। অভিযোগ উঠেছে, সাশ্রয়ী বিদ্যুত উৎপাদনের বৃহৎ প্রকল্পটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি তৎপরতা চালাচ্ছে।
পাওয়ার সেল সূত্র বলছে, গত ২৬ জানুয়ারি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। পর্যায়ক্রমে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে চূড়ান্ত দরপত্র খোলার দিন ছিল ৭ জুন। দ্বৈত জ্বালানিতে ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি চলবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে সরকারের অভিপ্রায় অনুযায়ী দাম পাওয়া গেছে। এখন প্রকল্পটি বাতিল করলে উচ্চমূল্যের রেন্টাল বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা বাড়বে।
পাওয়ার সেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রটির দরপত্র মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠানো হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম তিন দশমিক ৯৪ সেন্ট থেকে চার দশমিক এক সেন্টের মধ্যে রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় যা খুবই ইতিবাচক। চুক্তি স্বাক্ষরের ২৪ মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে।
সূত্র মতে, বিদ্যুত কেন্দ্রটি ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদীর তীরে নির্মাণ করার কথা। প্রকল্প এলাকার জমি সম্প্রতি পিডিবির নামে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। ফলে অন্য বিদ্যুত প্রকল্পের মতো জমিসংক্রান্ত জটিলতাও এখানে নেই। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চাওয়ায় কেন্দ্রটি সময়মতো উৎপাদনে আসার বিষয়টিও নিশ্চিত। কিন্তু একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাগড়া দিচ্ছে।
পাওয়ার সেল সূত্র বলছে, পিডিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইন্ধনে প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। অর্থের কোন ব্যবস্থা না থাকার পরও নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির এ ধরনের তৎপরতার পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত করার জন্য নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এম খোরশেদুল আলম বিদ্যুত বিভাগে দেয়া চিঠিতে এই প্রকল্পটি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র খোলার একদিন আগে ৬ জুন দেয়া চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলে জমির স্বল্পতা দেখা দেবে। কাজেই এই প্রকল্পটি বাতিল করা হোক। একই চিঠিতে কোম্পানিটি বলছে, সিরাজগঞ্জ একটি বড় বিদ্যুত হাব। তাই এখানে তারা কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী। কিন্তু বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য অর্থের সংস্থান কিভাবে হবে আদৌ হবে কি-না, সে সব বিষয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই এ ধরনের আগ্রহ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চিঠিতে এক্সপোর্ট ক্রেডিট ফান্ড (ইসিএফ) থেকে অর্থের সংস্থান হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
পাওয়ার সেলের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, কোথাও কোন সমস্যা না হলে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৪৮ মাস সময় প্রয়োজন হবে। সেখানে পাওয়ার সেলের দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকায় কেন্দ্রটি ২৪ মাসের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। দুই বছর এগিয়ে থাকা প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এতে তো আমরা আবার দুই বছর পিছিয়ে যাব। তাহলে এই দু’বছরের দাম কে দেবে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এতদিন যে কাজগুলো করা হলো তা কি প-শ্রম হবে। সরকার যেখানে বিদ্যুত প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সেখানে এ ধরনের তৎপরতার পেছনে কারা কাজ করছেন তা খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র মতে, এখন বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য অর্থায়ন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। দাতারা কি পরিমাণ ঋণ দিলে বাংলাদেশ ফেরত দিতে পারবে তা হিসেব করে অর্থায়ন করায় বিদ্যুত খাতে কাক্সিক্ষত বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারী প্রকল্পে অর্থ সঙ্কটের পাশাপাশি বড় আইপিপি প্রকল্পগুলোও ঝুলে যাচ্ছে।
একেবারে দরপত্র প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে প্রকল্প বাতিলের কথা কেন বলা হচ্ছে জানতে চাইলে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এপ্রিলে চিঠি দিয়েছি। তিনি ৬ জুন দরপত্র প্রক্রিয়ার শেষ সময়ে এসে চিঠি দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। কেন এই প্রকল্পটি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই প্রকল্প পরিবর্তে বা নতুন প্রকল্পের নির্মাণের কথা বলছি জমির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের জন্য। অর্থের সংস্থান কিভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিডার্স ফাইন্যান্স থেকে অর্থায়ন হবে বলে আশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.