বায়ান্ন বাজার ॥ তিপ্পান্ন গলি by মোরসালিন মিজান

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে একদল শিক্ষক উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন। এ দাবি মানতে নারাজ উপাচার্য। এই যখন অবস্থা তখন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিছু শিক্ষার্থীও। সঙ্গত কারণে ইস্যুটি নিয়ে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা।


কেউ বলছেন- উত্তাল বুয়েট। কেউ বলছেন আন্দোলনে অচল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সচেতন মানুষ এ দুটির একটিও বলতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, যারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার তাদের একটি অংশের পরিচয় সকলের কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততার বহু খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। চলমান কর্মসূচীগুলোকে তাই আন্দোলন বলা যাবে না বলে মনে করেন তারা। একইভাবে ‘উত্তাল’ শব্দটি অত্যন্ত ইতিবাচক আন্দোলন সংগ্রামের বেলায় ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তারা বলছেন, বুয়েটের বর্তমান অবস্থাকে এ শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। কারণ, শিক্ষার্থীদের বড় অংশটির স্বতঃস্ফূর্ত কোন অংশগ্রহণ নেই এখানে। তবে হ্যাঁ, সময় সুযোগটা সবসময়ই ভাল বুঝে জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা। আর তাই সুযোগ কাজে লাগাতে কৌশলে এগুচ্ছে তারা। বুয়েটের মতো শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ কাজে কতটা সফল হবেন তা আরও পরে বলা যাবে। তবে এখন এটুকু নিশ্চিত
করেই বলা যায়Ñ বুয়েটের পানি ঘোলা করার কাজটা তারা করতে পেরেছেন। এবার আসা যাক বর্ষার পানি প্রসঙ্গে। এখন পর্যন্ত বলা যাবে না, রাজধানীতে খুব বেশি বর্ষণ হচ্ছে। তবে একটু আধটু তো হচ্ছেই। আর তাতেই হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থা ঢাকাবাসীর। কারণ আর কিছু নয়, কাটাচেড়া সড়ক। পাড়ার ভেতরের সরু পথটি যেমন কাটা, তেমনি কাটা প্রধান প্রধান সড়কগুলো। সরকারের এই বিভাগ ওই সংস্থা মিলেমিশে কেটেছে। যেখানে মানুষের হাঁটার পথ খুঁজে নিতে হয় সেখানে খাল বিলের মতো করে গর্ত করেছে। কিন্তু যথারীতি বর্ষার আগে শেষ করতে পারেনি। ফলে ঢাকার বহু এলাকার সড়ক বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য। একটু বৃষ্টি হলে একূল ওকূল দুকূল ভেসে যায়। ভেসে যাচ্ছে। খাল বিল নদী নালা সবই দেখা যাচ্ছে রাজপথে! ফলে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ এখন চরমে। বৃহস্পতিবারের উদাহরণটাই দেয়া যাক। এদিন খুব বৃষ্টি হয়নি। টিপ টিপ ঝরছিল। এর পরও যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়ক প্রায় বন্ধ ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাদায় পানিতে দেবে ছিল দূরপাল্লার বাস ও ভারি যানবাহন। তিন ঘণ্টা চার ঘণ্টা সময় লেগেছে ঢাকায় প্রবেশ করতে। বিশ্বাস হয়? সায়েদাবাদ থেকে একটু এগোলে হাটখোলা। এখানকার অবস্থাও তা-ই। প্রধান সড়কের পাশে কমলা রানীর দীঘি যেন কেটে রাখা হয়েছে। ফলে রাস্তার আয়তন যারপরনাই কমে গেছে। দুর্ঘটনা ঘটছে কিছুক্ষণ পর পর। কখনো ছোট। কখনো বড়। এদিন যারা সায়েদাবাদ থেকে রাজধানীতে প্রবেশের বিকল্প পথ ধরেছেন তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। পুরো মানিকনগর এলাকার রাস্তা উন্মাদের মতো যেন কেটেছে কেউ। গলির ভেতরের সরু রাস্তার ঠিক মাঝখানে বিরাট লেকের মতো। প্রাইভেট কারগুলো দুই চাকা বৃষ্টিভেজা সড়কে আর বাকি দুই চাকা কৃত্রিম লেকের পানিতে ডুবিয়ে চলছিল। একই রকম কাত হয়ে চলছিল রিকশা। এসব কারণে যানজটও ছিল অসহনীয়। এদিন ঢাকায় প্রবেশ করা বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিন বা দ্ইু দিনের নয় এ গল্প। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী সড়কের উপর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলার কারণে আগে থেকে সইতে হচ্ছিল দুর্ভোগ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি আর অব্যবস্থাপনা। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি তা তারা জানেন না। কেউ কি জানে!

No comments

Powered by Blogger.