দীর্ঘ ৯ বছর পর কাল আওয়ামী যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস-পদপ্রত্যাশীদের গ্রুপিং লবিংয়ে মুখর কেন্দ্রীয় কার্যালয়

দীর্ঘ ৯ বছর পর আগামীকাল শনিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় কংগ্রেস। ইতোমধ্যেই যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের পদভারে মুখরিত গত সাড়ে তিন বছর অনেকটাই শূন্য পড়ে থাকা রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।


গঠনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী সারাদেশের কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হওয়ার বিধান থাকলেও পদপ্রত্যাশী নেতাদের কাছে কাউন্সিলরদের গুরুত্ব নেই, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সুদৃষ্টিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্লান্তিহীনভাবে পদপ্রত্যাশী নেতারা ছুটছেন মূল দল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের কাছে, দীর্ঘ ৯ বছর চলছে ব্যাপক গ্রুপিং-লবিং। দীর্ঘদিন পদবিহীন এক ঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতাও সহযোগী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এ সম্মেলন ঘিরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পদপ্রত্যাশী নেতাদের নামে করা হাজার হাজার ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে পুরো রাজধানী ছেয়ে ফেলার বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। কাউন্সিল ঘিরে টাকার ছড়াছড়ির অভিযোগেরও কমতি নেই।
দীর্ঘদিন পরে হলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা। আগামীকাল সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আয়োজিত বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ যুবলীগের এই জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সারাদেশ থেকে ১০ সহস্রাধিক ডেলিগেট ও কাউন্সিলররা যোগ দেবেন আগামীকালের সম্মেলনে।
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাতে কাউন্সিলরদের বৈঠকে নির্বাচন করা হবে যুবলীগের আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। এরই মধ্যে গত ৩ ও ৫ জুলাই যথাক্রমে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল কাউন্সিল শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণের পরবর্তী কমিটিও ঘোষণা করা হবে।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি যুবলীগের সর্বশেষ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠানের বিধান থাকলেও এবার হচ্ছে প্রায় ৯ বছর পর। কালকের সম্মেলনে ৭৪ সাংগঠনিক জেলার ২৫ জন করে কাউন্সিলর যোগ দেবেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার যুবলীগ নেতাকর্মী সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রেসিডিয়াম, সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী সদস্যের কলেবর বাড়ানো হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতির কথা জানাবেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনে বর্তমান নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতাদের জীবনবৃত্তান্ত ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সম্ভাব্য নেতাদের সম্পর্কে সরকারী বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে দলের আস্থাভাজন কয়েক নেতার সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা চান সহযোগী সংগঠনের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ত্যাগী, সুসংগঠক, মেধাবী ও বিচক্ষণরা নেতৃত্বে আসুক। তাঁর গ্রীন সিগন্যালেই যুবলীগসহ পরবর্তী সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মূল দুই পদ মনোনীত করা হবে এমনটাই বলছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।
জানা গেছে, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে এবার সমন্বয় করা হবে পদবিহীন হয়ে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন শেষে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও নতুন এই নেতৃত্বকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয় করেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মূল দলের হাইকমান্ড থেকে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম যেমন সংগঠনটির কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করছেন, ঠিক তেমনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাধারণ সম্পাদক হুইপ মির্জা আজম এমপিই যুবলীগের পরবর্তী কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করবে বলে জানা গেছে।
যুবলীগের পদপ্রত্যাশী অনেক ত্যাগী নেতারই অভিযোগ, ক্ষমতার গত সাড়ে তিন বছরে একটি বারের জন্য দলীয় কার্যালয়ে না এসে সরকারী প্রতিষ্ঠানেই ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজিতেই ব্যস্ত থেকেছে, কাউন্সিল সামনে রেখে বড় বড় পদ পেতে তারাই এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্নভাবে উপার্জিত অর্থ খরচ করে কাউন্সিলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে মাঠে থেকেছে, ক্ষমতার সাড়ে তিন বছরে ব্যবসার পরিবর্তে সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকেছে- এবারের সম্মেলনেও তাঁরা উপেক্ষিত হতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন অনেক নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মির্জা আজম এমপি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বড় পদ পেতে যাচ্ছেন। মির্জা আজম যদি যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে না চান তবে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীই পুনর্বার নির্বাচিত হতে পারেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন ক’জন যুবলীগের সাবেক নেতা। তাঁদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে মজিবুর রহমান চৌধুরী, এনায়েত কবির চঞ্চল, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, এ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, মঞ্জুরুল আলম শাহীন ও সুব্রত পালের নাম। আলোচনায় নানা জনের নাম এলেও যুবলীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদে চমক আসতে পারে বলেই গুঞ্জন রয়েছে।
সূত্র মতে, শীর্ষ দুই পদে না থাকলেও ছাত্রলীগের সাবেক যেসব ছাত্রনেতা বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সমন্বয় করা হতে পারে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহীম এমপি, সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, শাহজাদা মহিউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম কোতয়াল, মারুফা আক্তার পপি, আবদুল আলিম, দেলোয়ার হোসেন, সাবেক বিদায়ী ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রিপন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.