বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড-অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ান

অবকাঠামোগত সুবিধা অপ্রতুল থাকার পরও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে গত বছরগুলোর তুলনায়। এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আঙ্কটাডের একটি প্রতিবেদনে। রেকর্ড সৃষ্টিকারী ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলারের এই বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেও সক্ষম হবে। বিদেশি বিনিয়োগের নিকট-অতীতের হিসাবের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে এই বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ। তবে গ্রিন ফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগের বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। নতুন বিনিয়োগের হিসাবে বাংলাদেশ ২০১০ সালের তুলনায় ভালো করতে পারেনি। ওই সময় বাংলাদেশে যেখানে বিনিয়োগ হয়েছে ৫২ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১১ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ডলারে। এই ১৬ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে ভবিষ্যতে নতুনদের আকৃষ্ট করার প্রয়োজনে। এর পরও ব্যবসারত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস খাতের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশে যে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে তা প্রমাণিত। এখন অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে পারলে সহজেই এ বিনিয়োগের পরিমাণ বছরে ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। সংগত কারণেই বাংলাদেশকে এসব অসুবিধা দূর করার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাকে যতটা সম্ভব দ্রুততর করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করার মতো। কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই তাদের কাজের জন্য বড় বাধা হিসেবে গণ্য করে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও কখনো কখনো বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহী করে। বিশেষ করে ঘন ঘন আইন পরিবর্তনের বিষয়টি তারা জোর দিয়েই বলে থাকে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আইন পরিবর্তন হওয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দেওয়ার রেওয়াজ আছে এখানে। এই রীতি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিরক্তিকর। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘন ঘন আইন পরিবর্তনের এই প্রচেষ্টাকে বাদ দিতে হবে। সরকারের উত্তরাধিকারী হবে সরকার। এই মানসিকতা থাকলে শুধু বিনিয়োগকারীই নয়, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হরতাল-ধর্মঘটের মতো নেতিবাচক কর্মসূচিকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধরে রাখা। তার জন্য রাজনৈতিক পক্ষগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে তেমন সংস্কৃতি গড়ে উঠুক।

No comments

Powered by Blogger.