এক পুরুষ গেল, অন্যজন এলো

‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’ ছবিটার কথা নিশ্চয় সকলেরই মনে আছে? না, শুধু এই ছবিটাই বা কেন, ‘খামোশি’, ‘আকেলে হম আকেলে তুম’, ‘মন’, ‘দিল সে’, ‘কম্পানি’-র মত একরাশ হিট ছবিও আমাদের সকলেরই মনে জমিয়ে ঠাঁই নিয়ে আছে। এছাড়াও তালিকায় আছে ‘এক ছোটি সি লাভ স্টোরি’; কন্ট্রোভার্শিয়াল ব্যাপার-স্যাপারের জন্য ছবিটি বেশ ফোকাসড হয়ে উঠেছিল।

এই ছবিগুলো নিয়ে এত কথা বলার কারণ একটাই- এই সবকটা ছবিতেই নায়িকা হিসেবে ছিলেন মণীষা কৈরালা। সেই মণীষা কৈরালা, যিনি বারবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন তার অতুলনীয় সৌন্দর্য আর উত্তাল ব্যক্তিগত জীবনের জন্য। কত পুরুষের সঙ্গেই না তাকে জড়িয়ে রটনায় পঞ্চমুখ হয়েছে নিন্দুকেরা! অজয় দেবগন, নানা পাটেকর- বাদ যাননি মুম্বাইয়ের ছবি কারখানার প্রায় কোনো পুরুষই। এত কিছুর পরে নেপালের ব্যবসায়ী সম্রাট দালালকে বিয়ে করে নিন্দুকদের মুখ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করেছিলেন বটে নায়িকা। তবে ওই কিছুদিনের জন্যই বটে! কেননা, সম্প্রতি বিয়ে ভেঙে আবার একলা জীবনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন মণীষা।
গত ২০১০ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন মণীষা নেপালের সম্রাট দালালের সঙ্গে। জাঁকজমকে ভরা এই বিবাহে বেশ ভালোই ছিলেন মণীষা শুরুর দিকে। তবে, কহানি মে ট্যুইস্ট শুরু হয়ে যায় কিছুদিন পর থেকেই। আফটার অল, রুপোলি পর্দার গল্পের মতো বাস্তব জীবনের সব সম্পর্কই তো মসৃণ পথে চলে না। মণীষা বেচারিরও তাই হয়! বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মনীষার কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে এই সম্পর্ক। কাছের বন্ধুবান্ধবদেরও বিয়ে নিয়ে ভাল না থাকার কথা প্রায়ই বলতে শুরু করেছিলেন মণীষা- এমনটাই শোনা যাচ্ছে বাজারে কান পাতলে!

কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের মতো প্রথমেই বিয়ে ভেঙে ফেলার কথা না ভেবে জোড়া লাগানোর চেষ্টায় মনীষা পিছ-পা হননি। শোনা যায়, মুম্বইয়ে এসে নায়িকা যোগ দেন কোনো সংস্থায়; মনের জোর পাওয়ার তাগিদ এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল তার কাছে। শুধু এটুকুই নয়, বিবাহের বন্ধনকে আরও শক্তভাবে বেঁধে ফেলার জন্য তিনি নাকি চেন্নাইয়ের কাছে ওয়াননেস বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সবরকমেরই প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ায় কী আর করা- অবশেষে দাঁড়ি টানতেই হলো বিয়েতে। ভেঙে গেল দু’বছরের এই সম্পর্ক।

তা বলে মণীষা কিন্তু এখন মোটেই একা নন! জীবনের সার বুঝেছেন এই মেয়ে- ছেলেরা অবিরাম আসে আর যায়; এটাই নিয়ম! কাজে কাজেই তিনি খুঁজে নিয়েছেন এমন এক পুরুষকে, যাকে মান্যিগন্যি করে চলে সারা দুনিয়া। তার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন মণীষা; তথাগত বুদ্ধর সঙ্গেই এখন কেবল তার প্রাণের খেলা। এমনকি, বুদ্ধজীবন নিয়ে একটি ছবি তৈরিতেও হাত দিয়েছেন তিনি।

মণীষার সমসাময়িক অনেক নায়িকাই আপাতত ব্যস্ত জীবনের সেকেন্ড ইনিংস নিয়ে; আবার রুপোলি পর্দায় ফিরে আসার জন্য তারা চালিয়ে যাচ্ছেন জোর লড়াই। সেদিক থেকে মণীষার এই সিদ্ধান্ত চমকে দিয়েছে সবাইকে। বিয়ে ভেঙে, একটা মানসিক টালমাটাল সামলে যেভাবে তিনি মন দিয়েছেন তার প্রথম ছবি পরিচালনায়, তা তারিফ করার মতো! কিন্তু এত প্লট থাকতে বুদ্ধজীবনকেই ছবি করার জন্য কেন বেছে নিলেন মণীষা?

আসলে ছোটবেলা থেকেই মণীষা বুদ্ধর ভক্ত। তাই জীবনের এই টালমাটাল পর্বে যখন এক শ্রীলঙ্কার প্রযোজক তাকে বুদ্ধজীবন নিয়ে ছবি করার প্রস্তাব দেন, সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দেরি করেননি নায়িকা। এমন সুযোগ কি ছাড়া যায়? অনেকদিন থেকে বলিউড বানাতে চাইছে বুদ্ধকে নিয়ে ছবি; যে কোনো কারণেই হোক না, বাতিল হয়ে যাচ্ছে সব পরিকল্পনা। এই যেমন, মীরা নায়ার তার বুদ্ধছবি বাতিল করে দিয়েছিলেন ইতালির পরিচালক বার্নান্দো বার্তোলুচির ‘লিটল বুদ্ধ’ ছবির জন্য! আবার শ্যাম বেনেগল ভেবেছিলেন, হৃতিক রোশনকে নায়ক করে বানাবেন বুদ্ধজীবন; ছবির নামও ঠিক হয়েছিল ‘সিদ্ধার্থ’। আশুতোষ গোয়াড়িকরও ভেবেছিলেন, বুদ্ধকে নায়ক করে ছবি বানাবেন; কিন্তু ওই ভাবাই সার! একটা ছবিও এখনও পর্যন্ত তৈরি হওয়ার নামগন্ধ নেই।

অতএব, যা দেখা যাচ্ছে, বুদ্ধছবির ইতিহাসে বেশ বড়সড় একটা দাঁও মারলেন মণীষা। পরিচালনা তার, চিত্রনাট্যও তার। তার উপর আবার ছবিটা আগাগোড়াই শ্যুট করা হবে শ্রীলঙ্কার নয়নাভিরাম পরিবেশে। আর কী চাই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার জন্য? যার কাছে খোদ বুদ্ধ আছেন, তার আর কী বা প্রয়োজন?

তা, আপাতত মণীষার পরিকল্পনা কী? চারপাশের ফিসফাসে কান পাতলে জানা যাচ্ছে, নেপালে পরিবারের কাছে ফেরার জন্য নাকি মণীষা অলরেডি ব্যাগপত্তর গোছাতে শুরু করে দিয়েছেন। সেখানে কিছুদিন ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে, একটু নির্ভার হয়ে ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে বসবেন তিনি। তবে আর কী, ভালো যখন ছিলেন না, আর শত চেষ্টার পরেও যখন স্বাভাবিক করতে পারলেন না এই বিবাহের সম্পর্কটাকে, তবে একাই থাকুক আপাতত, ভালো থাকুন আপনি মণীষা। সাধারণ পুরুষে আর আপনার কী বা প্রয়োজন; বুদ্ধই তো আছেন আপনার সঙ্গে। সূত্র: ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.