বুয়েটে আবার অচলাবস্থা

মাননীয় চ্যান্সেলরের হস্তক্ষেপ চাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে আবার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বুয়েটের তিনটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ করেছেন।


সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চলমান আন্দোলনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন; কিন্তু প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, উপাচার্য এখনো পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছেন। অন্যদিকে রমজান মাস আসতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বাকি থাকলেও বুয়েট প্রশাসন গত মঙ্গলবার রাতে রোজা ও ঈদ মিলিয়ে ৪৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এর আগে ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত বুয়েট শিক্ষক সমিতির আহ্বানে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন শিক্ষকরা। বন্ধ ছিল ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম। তারপর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আবার ৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বুয়েটের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নোংরা রাজনৈতিক দলীয়করণের খেলা চরম রূপ নিয়েছে। এর আগে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, আবারও সেখানে শিক্ষকদের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে পাঁচ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচে চলে গেছে। বাকি ছিল বুয়েট। সেটিতেও কি এখন নিচে নামার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে?
বুয়েট শিক্ষক সমিতি বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ ও পরীক্ষার ফল পরিবর্তনসহ বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমিতি বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে আরো কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করার দাবিও রয়েছে। এসব অভিযোগ ও দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যেসব দাবি পূরণ করা সম্ভব তার সবই করা হয়েছে। তাঁদের মূল অভিযোগ এবং কিছু দাবিদাওয়ার সমাধান একান্তভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এখতিয়ার। আর সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের খোলামেলা আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তার পরিচয় এ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ চলমান আন্দোলন নিয়ে যে লিফলেট প্রকাশ করেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। সেখানে লেখা হয়েছে, 'নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহ্রীর ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির বুয়েট ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা প্রণয়ন করেছে।' সাবাশ তাদের মুক্তিযুদ্ধপ্রেম! শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সম্পর্কে এ ধরনের উক্তি করার ধৃষ্টতা তারা কিভাবে পায়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ধরনের উক্তি করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করার শামিল এবং তা রাজাকার-আলবদরদের মতোই একটি ঘৃণ্য অপচেষ্টা। আমরা এই লিফলেট প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট শিক্ষকদের অভিযোগের ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের যে সুপারিশ করেছে, আমরা তাকেই সমর্থন করি। আমরা বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ ও ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এখানে মাননীয় চ্যান্সেলরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

No comments

Powered by Blogger.