নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে উদ্দীপনা সৃষ্টি-বিসিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণচুক্তি বাতিল করার পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়ায় জনগণের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একটি স্কুলছাত্র


আমাকে ফোন করে টিফিন আর যাতায়াতের পয়সা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য দেয়ার কথা বলেছে। একটা উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। খবর বাসসর ও বিডি নিউজের।
দেশকে আত্মনির্ভর করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা এ দিনও বলেছেন, আমরা চাই, দেশ এগিয়ে যাক। আর পরমুখাপেক্ষিতা নয়। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে গত ২৯ জুন বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। ওই চুক্তি বাতিল হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত এই সেতু নির্মাণের রূপরেখা ঘোষণা করেন। তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তাঁর পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ দুর্নীতি করার চেষ্টা করলে তা সরাসরি তাঁকে জানানোর অনুরোধ করেন। এ জন্য দুটি মোবাইল নম্বর ও একটি ই-মেইল ঠিকানাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিসিকের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন ঘোষণার আগে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুত, তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিশ্বমন্দা সত্ত্বে¡ও আমাদের রফতানি বেড়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে আমরা প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন, যুক্তফ্রন্টের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিসিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক ও মুদ্রণ খাতের জন্য স্বতন্ত্র শিল্পপার্ক স্থাপন এবং দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বহুমুখিকরণ ও উন্নয়নে বিসিক শিল্প নগরীগুলো আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করছে। ‘যুবকরা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ চায়। তাদেরকে আমাদের পথ দেখাতে হবে। যাতে করে তারা বিসিক শিল্পে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাশি আরও অনেকের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জামদানি, হোসিয়ারি ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনের জন্য স্বতন্ত্র শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ওষুধ ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য দুটি বিশেষায়িত শিল্পপার্ক এবং সিরাজগঞ্জে একটি বহুমুখী শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, সাভারে চামড়াজাত পণ্যের জন্য শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া শতরঞ্জি ও বেনারসী শিল্পের উন্নয়নের দুটি স্বতন্ত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পপণ্য বহুমুখীকরণ ও উন্নয়নে বিসিকের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক শিল্প বিকাশের জন্য বিসিক প্রতিষ্ঠা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় জাতির পিতার নীতি অনুসরণ করে গ্রামীণ অর্থনীতি তেজিকরণ ও নারী উদ্যোক্তা সৃজনসহ কয়েকটি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়। এসব কর্মসূচীর আওতায় ২ লাখ ৪৬ হাজার উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ এবং ২ লাখ ৭ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে ২শ’ ৫১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু আমাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের ১৮৩টি উপজেলায় বিসিকের প্রকল্পগুলো স্থগিত করে দেয়। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ক্ষুদ্রশিল্প ক্ষুদ্র নয়, দিন দিন বৃহৎ হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের অর্থনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছিল। ‘তাঁর সরকার এ অচলাবস্থা কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও ফরোয়ার্ড লুকিং শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতির আওতায় মাঝারি শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, জাহাজ, বিদ্যুত, গ্যাস, সার, ওষুধ, পাট ও চামড়াসহ সম্ভাবনাময় খাত এবং পণ্য বহুমুখীকরণ ও নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৭৪টি শিল্প নগরীতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এসব শিল্পে প্রায় ৪ লাখ মানুষ কাজ করছে। বিসিক শিল্পনগরীতে বছরে উৎপাদিত ২৯ হাজার কোটি টাকার পণ্যের মধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে সার্বিক সহযোগিতা দিতে শিল্প উদ্যোক্তা ও বিসিকের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিসিকের কর্মকাণ্ড ও মূল্যায়নভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.