রাস্তায় বেপরোয়া কিশোর চালক by মোহসিন কবির

রাজধানীতে শিশু হেলপার আর কিশোর ড্রাইভার দিয়ে চলে বেশির ভাগ মিনিবাস, লেগুনা, পিকআপ, সিএনজি চালিত অটোরিকশা। কখনো কখনো অদক্ষ-অদড় হাতে বড় বাসও চলতে দেখা যায়। এখানেই থেমে নেই। এসব চালকের আবার বেশির ভাগেরই নেই কোনো লাইসেন্স। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ তো দূরের কথা।

অনেক সময় নেশাগ্রস্ত হয়েও তারা গাড়ি চালায় বলে অকপটে স্বীকার করেছে খোদ ওই চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় সিগারেট টানা, মোবাইল ফোনে কথা বলা তাদের নিয়মিত ব্যাপার।
শারীরিক দুর্বলতা, অত্যধিক পরিশ্রম, নেশাগ্রস্ততার কারণে এসব অল্প বয়সী চালকদের মন-মেজাজ রুক্ষ থাকে সবসময়। ফলে রাস্তায় তারা বেপরোয়া। এর পরিণাম কী তা প্রতিদিনই টের পাচ্ছে কেউ না কেউ।

গুলিস্তানে দেখা মিলল লেগুনাচালক এক কিশোরের। নাম হালিম। বয়স জিজ্ঞেস করতে জানাল ২২। কত বছর ধরে গাড়ি চালাও? ‘১১ বছর ধরে’। এখনো মুখে গোঁফ-দাড়ির রেখা ওঠেনি। তার বয়স ১৮ বছরের নিচেই বলে সহজেই অনুমেয়।

সঙ্গে লাইসেন্স আছে? প্রথমে জানায়, লাইসেন্স বাড়িতে। কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে, ‘আমগো আবার লাইসেন্স লাগে নাকি, সার্জেন্টই আমগো লাইসেন্স। টাকা দিলেই লাইসেন্স হয়া যায়।’

হালিম বলে চলল, ‘এই রোডে লাইসেন্স লাগে না। আর তাছাড়া চাইলেও জরিমানা (ঘুষ) দিয়ে দেই। খাচ্চর সার্জেন্ট হলে ১৫০ টাকা, আর ভালো হলে ১০০ টাকা দিলেই চলে।’

আরেক চালক আলামিনকে তার লাইসেন্স আছে কি না জিজ্ঞেস করলে সে এক গাল হেসে বলে, ‘দেশ চলে ঘুষে, সব ঘুষ, ঘুষ দিলে মরা মানুষও জ্যান্ত হইয়া যায়।’ আলামিনের কিশোর বয়সও তার মুখাবয়বেই প্রকাশ পেয়েছে।

এরপর যাই গুলিস্তানের দায়িত্বরত সার্জেন্ট নাসিরের কাছে। তিনি তখন মতিঝিল-গুলশান রুটের ৬ নম্বর বাস থেকে কাগজপত্র পরীক্ষার কথা বলে ‘উৎকোচ’ নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সটকে পড়েন। অবশেষে অনেকদূর হেঁটে তার পিছু নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়।

লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাজধানীতে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রাণহানি হয়েছে দুইজন সাংবাদিকের। এছাড়া সারা দেশে আরও ১৩ জনের প্রাণ গেছে একই কারণে।

সচেতন নাগরিকদের দাবি, চালকদের ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ, তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, কিশোরদের গাড়ি চালাতে না দেওয়া, ট্রাফিক পুলিশের সঠিক দ্বায়িত্ব পালন করা, সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.