ছয় বছর ধরে খেলছি কখনো নিজেকে তারকা মনে হয়নি

লা মেসিয়াতে মেসি, জাভিদের সঙ্গে বেড়ে উঠলেও পেশাদার ফুটবলে তাঁর শুরুটা ইংল্যান্ডে। ২০০৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সেস্ক ফ্যাব্রেগাস যোগ দিয়েছিলেন আর্সেনালে। সেখানে প্রায় আট বছর খেলার পর এ মিডফিল্ডার আবারও ফিরে এসেছেন শৈশবের ক্লাবে। তারায় ভরা বার্সেলোনায় মানিয়েও নিয়েছেন ভালোভাবে। শৈশবের ক্লাবে ফিরে আসা, আর্সেনালে খেলার অভিজ্ঞতা এবং সেই সঙ্গে সামনের ক্লাব বিশ্বকাপ। ফিফা ডটকমকে দেওয়া


ফ্যাব্রেগাসের এ সাক্ষাৎকারে আছে আরো অনেক কিছু_প্রশ্ন : বার্সেলোনায় ফিরে এসে কেমন কাটল ক'টা মাস?
সেস্ক ফ্যাব্রেগাস : অসাধারণ বলতে পারেন। আমি খুবই খুশি। ফর্মে আছি শুরু থেকে, তাই সন্তুষ্টিটা আরো বেশি। সত্যি বলছি, দলের সবাই ভীষণভাবে সাহায্য করেছে আমাকে। যাদের সঙ্গে লা মেসিয়াতে বেড়ে উঠেছি তারা তো বটেই, দলের অন্য খেলোয়াড়রাও আপন করে নিয়েছে আমাকে। আপন করে নিয়েছে দর্শকরাও।
প্রশ্ন : মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০০৩ সালে বার্সেলোনা ছেড়েছিলেন। ওই সময়ের বার্সেলোনা আর এখনকার বার্সেলোনার মধ্যে কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে?
ফ্যাব্রেগাস : কিছু দিক দিয়ে তো অবশ্যই অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে শ্রদ্ধার জায়গাটা রয়ে গেছে আগের মতোই। এখানকার পরিবেশটা খুবই আন্তরিক, পারিবারিকও বলতে পারেন। দিনের পর দিন আমাদের যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এককথায় অসাধারণ। অনুশীলন আর ম্যাচগুলো উপভোগ করি সবাই। এখানে আমরা যেভাবে এক হয়ে থাকি, এককথায় বললে সেটাকে বিরলই বলতে হয়।
প্রশ্ন : শুরু থেকেই ছন্দে থাকবেন, ন্যু ক্যাম্পে আসার আগে কি এমনটা মনে হয়েছিল?
ফ্যাব্রেগাস : জানতাম বার্সেলোনার মতো দলে জায়গা পাওয়াটা কঠিন তার পরও আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আর এখন তো আমি মহাখুশি। ফিট ছিলাম এবং আমাকে মাঠে নামানো হয়নি এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি। প্রায় সব ম্যাচে মাঠেও ছিলাম শেষ পর্যন্ত।
প্রশ্ন : আপনি খেলেন মাঠজুড়ে। কিন্তু যদি প্রিয় কোনো পজিশনে খেলার কথা বলা হয় তাহলে কোথায় খেলতে চাইবেন?
ফ্যাব্রেগাস : (হেসে) সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলি বলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে খেলতে হয় বিভিন্ন জায়গায়। সত্যি কথা বলতে কি, আমার প্রিয় পজিশন ওটাই।
প্রশ্ন : ইংলিশ ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা কি আরো পরিপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে আপনাকে?
ফ্যাব্রেগাস : আরো পরিপূর্ণ কথাটা ঠিক বুঝি না। তবে ইংলিশ লিগে খেলে যে অনেক কিছু শিখেছি এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। শারীরিকভাবে কিংবা আরো দ্রুত হতে অনেক সাহায্য করেছে ইংল্যান্ডে খেলা।
প্রশ্ন : যেভাবে ভেবেছিলেন গত মৌসুমটা আর্সেনালে সেভাবে কাটেনি আপনার। এরপরই কি বুঝতে পারেন ইংল্যান্ডে আপনার সময় শেষ হয়ে এসেছে?
ফ্যাব্রেগাস : এক মুহূর্তের জন্যও না, কেননা আমি জানতাম না কি অপেক্ষা করে আছে ভবিষ্যতে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি আর্সেনালের খেলোয়াড় ছিলাম তাই ক্লাব ছাড়ার কথা ভাবিনি। চোটের কারণে গত মৌসুমে খুব বেশি ম্যাচে খেলতে পারিনি বলে হয়তো কারো কারো মনে হয়েছে মৌসুমটা খারাপ কেটেছে আমার। কিন্তু আমি এটা মানছি না। কেননা তার পরও গোল করেছিলাম ৯টি আর তৈরি করে দিয়েছিলাম ২০টির মতো। সত্যিটা হচ্ছে, একটা ইনজুরি ভালো হতে না হতে পড়ছিলাম আরেকটা ইনজুরিতে। পুরোপুরি ফিটনেস ফিরে পেতে পেতে একটা না একটা কিছু ঘটে যেত। তবে মানসিকভাবে আমার শতভাগ মনোযোগ ছিল আর্সেনালেই।
প্রশ্ন : জাতীয় দলেও গত কিছুদিন অসাধারণ খেলছেন। স্পেনের তারা ভরা দলে আরো বেশি করে (সেরা একাদশে খেলে) আলো ছড়াতে চান নিশ্চয়ই?
ফ্যাব্রেগাস : দলের হয়ে আরো বেশি অবদান রাখার আশা করছি অবশ্যই। তবে জাতীয় দলে ছয় বছর খেলেও নিজেকে কখনো তারকা ভাবিনি আমি। হ্যাঁ সব সময় সেরা একাদশে সুযোগ পাইনি আর অল্প সময়ে (বদলি হিসেবে নেমে) নিজের সেরাটা খেলাও কঠিন। এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, কোচ যখন চাইবেন আমি খেলতে প্রস্তুত তখনই।
প্রশ্ন : ক্লাব ফুটবলে ফেরা যাক। ১০ ডিসেম্বর রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে আপনাদের এল ক্লাসিকো। এর পরই আসছেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে। চাপ কি অনুভব করছেন এখন থেকেই?
ফ্যাব্রেগাস : এটা বার্সেলোনা আর আমরা মাঠে নামি প্রতিটা ম্যাচ জিততেই। ভক্তদের প্রত্যাশাটাও এমনই। জয়টা তাই আমাদের লক্ষ্য হয়ে পড়ে আর চলতে হয় এভাবেই। ব্যাপারটা একই রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাস, বায়ার্ন মিউনিখ বা অন্য বড় দলের বেলাতেও।
প্রশ্ন : প্রথমবারের মতো ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে আসছেন, আপনার অনুভূতি?
ফ্যাব্রেগাস : স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ উচ্ছ্বাসের। জাপান সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই, এবারই প্রথম যাচ্ছি সেখানে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে দ্রুত, যদিও সেখানে খুবই কঠিন ম্যাচ খেলব অল্প ক'দিনের প্রস্তুতিতে। যাত্রাটাও দীর্ঘ ও ক্লান্তির হবে। তবে আসল ব্যাপার হচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ জেতাটা, এ জন্য নিজেদের উজাড় করে দেব সবাই।
প্রশ্ন : জাপান ঘুরে দেখবেন নিশ্চয়ই?
ফ্যাব্রেগাস : আমার এবং অনেকের জন্য জাপান নতুন দেশ হলেও আগে আমাদের মনোযোগ থাকেবে মাঠের খেলায়। ট্রফিটা জিততে হবে আগে। তারপর অন্য কিছু। তবে হ্যাঁ, জাপানে যখন এসেছি তখন বন্ধুবান্ধব যারা আমাদের সঙ্গে থাকবে তাদের নিয়ে জাপান আবিষ্কারের চেষ্টা করব। দেখতে হবে না দেশটার নাম জাপান (হেসে)!

No comments

Powered by Blogger.