বিআরটিএ নিষ্ক্রিয় যোগাযোগমন্ত্রী নির্বিকার by পার্থ সারথি দাস

যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালার অভাব, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও জনবল সংকটে অনেকটাই অকার্যকর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মহাসড়ক ও টার্মিনালে চাঁদাবাজি, ৩০০ রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে বাণিজ্য, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স-কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংস্থাটি। সংস্থার ৬২টি শাখা অফিস চালু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও এখনো ৩০টি চালু করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ আছে, সংস্থাটিকে কার্যকর করে তুলতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না যোগাযোগমন্ত্রী।


জানা গেছে, গত এক বছরে জমা হওয়া শতাধিক অভিযোগ খুলেও দেখেননি সংস্থাটির কর্মকর্তারা। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ সংস্থার আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। বিআরটিএর দুর্নীতিবাজদের মধ্যে কোন শ্রেণীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় এবং কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিআরটিএ বিভাগীয় মামলা করবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় কাটছে সময়। প্রায় তিন মাস আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মতামত জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠালেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
সংস্থার এমন দশার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত ১৮ নভেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বিআরটিএকে কার্যকর ও গতিশীল করতে অনলাইনে গ্রাহকসেবা পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। আর যেসব দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো হয়েছে আগের সরকারের আমলে।'
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা দুর্নীতিবাজমুক্ত ও কার্যকর বিআরটিএ গড়তে উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। আমরাও দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুদককে সহযোগিতা করছি। জনবল সংকট ও নীতিমালার অভাবে সংস্থাটি নিজেই সংকটে আছে। আমরা সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি।'
বদলি-বাণিজ্য : বিআরটিএর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপে এবং অর্থের বিনিময়ে বিআরটিএতে চলে 'বদলি-বাণিজ্য'। মহাজোট ক্ষমতায় আসার তিন মাসের ব্যবধানেই ১৩৬ জন কর্মকর্তাকে এক কার্যালয় থেকে অন্য কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
ওই ঘটনার পর বিআরটিএর ওই সময়ের চেয়ারম্যান কামরুল হাসানকেও বদলি হতে হয়েছে কর্মকর্তাদের তোপের মুখে। বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) তপন কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে জানান, ওই ঘটনার পর তিনি তদন্ত করেছিলেন। পরে দুদকও তদন্ত করে।
জানা গেছে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বিআরটিএর আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের দূরের কর্মস্থলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। এ কারণে বিআরটিএতে এখনো চলছে বদলি আতঙ্ক। বিআরটিএতে দুর্নীতিবাজ সাত কর্মকর্তার তেমন কোনো শাস্তি হচ্ছে না। উল্টো তাঁদের সুবিধাজনক স্থানে বদলি করা হয়। জরুরি অবস্থার সময় সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের অন্যতম কাজী মাহবুবুর রহমানকে বর্তমান সরকারের আমলে সুবিধাজনক বলে পরিচিত বিআরটিএর টাঙ্গাইল কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক পদে বদলি করা হয়।
৩০ শাখা অফিস চালু করা যাচ্ছে না : বিআরটিএর প্রশাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৪৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সরকার নিয়োগ দেয় ২৯১ জন। অবসর, চাকরিচ্যুতি ও বদলির কারণে জনবল কমে এখন হয়েছে ৩৬১ জন। জনসংখ্যা, সড়ক ও মোটরযান বেড়ে গেলে বিআরটিএ ৯২৩ জনবল সংবলিত নতুন একটি জনবল কাঠামোর প্রস্তাব করে। এটিও ঝুলে আছে। এ কারণে বিআরটিএর অফিসগুলো 'গ্যাটিস' ও দালালনির্ভর হয়ে পড়েছে। বিআরটিএর প্রশাসন শাখার হিসাবে, সংস্থার ৬২টি সার্কেল অফিস থাকার সিদ্ধান্ত ছিল। ৩২টি চালু আছে। ৩০টি অফিসই জনবলের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ছয় মাস আগে অনুমোদন হলেও ঢাকা মহানগর সার্কেল-৩ অফিস চালু করা যাচ্ছে না জায়গা ও জনবল সংকটের কারণে। চট্টগ্রাম নগরে চট্টগ্রাম মেট্রো-২ অফিসও চালু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) তপন কুমার সরকার বলেন, রাজধানীতে মিরপুর ও ইকুরিয়ায় দুটি অফিসের মাধ্যমে বেড়ে যাওয়া গ্রাহকের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ড্রাইভিং ও ফিটনেস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাসহ অফিসও পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নেই : পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বিআরটিএ। ৩২৩টি রুটের মধ্যে কমপক্ষে ৯০টিতে চাঁদাবাজি চলছে বিভিন্ন সংগঠনের নামে। রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনালেই দিনে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. করম আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের বাস-মিনিবাস থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে ১৫ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে দুই বছর ধরে। এই টোলবাজি বন্ধের জন্য গত ২৪ জুলাই যোগাযোগসচিবের কাছে আবেদন করি। এটি পরে বিআরটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু এই চাঁদাবাজি বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'
বিআরটিএর নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে গাড়িপ্রতি ১৮০ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলে গত ৭ মে অভিযোগ করেন বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ। এই অভিযোগ পেয়েও বিআরটিএ প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়নি। এভাবেই গত এক বছরে বিআরটিএতে জমা পড়া বহু অভিযোগ রয়েছে নিষ্পত্তিহীন।
৮০ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া-বাণিজ্যে : বিআরটিএর হিসাব মতে, দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেট কার আছে দুই লাখ ১৬ হাজার এবং মাইক্রোবাস, জিপ, ওয়াগন আছে ৯৫ হাজার। বিআরটিএ কর্মকর্তা ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৮০ হাজার প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। রুট পারমিট ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন না নিয়েই চালানো হচ্ছে এসব যানবাহন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তার ওপর স্ট্যান্ড বানিয়ে চলছে এই 'ভাড়া-বাণিজ্য'। কিন্তু বিআরটিএ এই বাণিজ্য বন্ধে নির্বিকার।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালানোর কোনো বৈধতা নেই। মাইক্রোবাস ভাড়ায় চালাতে হলে এর ওপরের অংশ হলুদ ও অন্য অংশে কালো রং থাকতে হবে।
বিআরটিএর মিরপুর অফিসের সহকারী পরিচালক মহসীন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে চালাতে হলে সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তন করতে হয়। ভাড়ায় চালিত একটি মাইক্রোবাস থেকে সরকার বছরে ১৪ হাজার টাকা কর ও ফি পেয়ে থাকে। ঢাকা মেট্রো-প ও ছ সিরিয়াল ছাড়া বাকি ক, খ, গ, ঘ সিরিয়ালের গাড়িগুলো রুট পারমিট না নিয়েই ভাড়ায় চালাচ্ছে। এ কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, সাদা প্লেটে কালো নম্বর সংবলিত গাড়িগুলো রুট পারমিট নিয়ে ভাড়ায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কালোর মধ্যে সাদা নম্বর প্লেটের গাড়ি ভাড়ায় ব্যবহার করার কোনো বৈধতা নেই। এগুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
গত সোমবার রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ দখল করে পার্কিং করা আছে শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। মাইক্রেবাসগুলোতে হলুদ ও কালো রং নেই। সকাল ১০টার দিকে ত্রিশোর্ধ্ব মনির হোসেন সেখানে উঁকি দিতেই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেন ছয়-সাতজন পরিবহন শ্রমিক। মনির তাঁদের বলেন, রাজধানীর উত্তরার একটি অনুষ্ঠানে সাতটি গাড়ি ভাড়ায় নিতে এসেছেন তিনি। কিন্তু মনিরের মুখ থেকে কথা বেরোনো মাত্রই কেউ বলল, ১৩ জন বসতে পারবে এমন মাইক্রোবাসে এক দিনের ভাড়া দিতে হবে তিন হাজার টাকা। কেউ হাঁকল সাড়ে তিন হাজার। জানতে চাইলে মাইক্রোবাসচালক সাদির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাড়ার কোনো তালিকা নেই। যে যেমন পারে তেমন লয়।'
শুধু মুক্তাঙ্গন নয়, রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, শাহবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ও মাঠে গাড়ি পার্কিং করে কিংবা দোকানঘর বানিয়ে 'রেন্ট এ কার' ব্যবসা চলছে। সাতরাস্তার মোড় এলাকার একজন ব্যবসায়ী দুটি প্রাইভেটকার বক্তিগতভাবে ব্যবহারের নিবন্ধন নিয়ে ভাড়ায় চালাচ্ছেন। একটি রেন্ট এ কার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর গত ১ অক্টোবর চুক্তি হয়েছে। তাঁর একটি গাড়ির নম্বর হচ্ছে ঢাকা-মেট্রো-গ ২১৭১৪৪। প্রাইভেটকার চালক মো. জলিল জানান, এখন ভাড়ায় এভাবেই অনেকে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ জন্য কোনো ধরনের অনুমতি নিতে হয় না। গত রবিবার মুক্তাঙ্গনে গেলে 'ভাড়ায় চালিত' ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৩২৩৯ নম্বরের মাইক্রোবাসটির ওপরের অংশে হলুদ রং চোখে পড়েনি।
ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত কমিশনার জায়েদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রেন্ট এ কারের গাড়িগুলো রুট পারমিট ছাড়া অবৈধভাবে চলছে। প্রতিদিন আমাদের জোনে এ জন্য গড়ে দুই-তিনটি মামলা হচ্ছে।'
বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) তপন কুমার সরকার বলেন, 'ব্যক্তিগত গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের মাত্র দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। এ দুটি আদালত মাঝেমধ্যে এ ধরনের গাড়ি ধরে ডাম্পিং করছেন। জরিমানাও করছেন।'
তিন হাজার অটোরিকশায় 'প্রাইভেট' প্রতারণা : সিএনজিচালিত অটোরিকশায় 'প্রাইভেট' লিখে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিটারে ভাড়া প্রদর্শন করার কথা। কিন্তু প্রাইভেট অটোরিকশার ক্ষেত্রে তা করতে হয় না। এ কারণে চালকরা এমনটি করছেন। পরিবহন সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এই প্রতারণার মাধ্যমে। গত মঙ্গলবার বিকেলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গেলে কয়েকটি অটোরিকশার চালককে যাত্রীদের বারবার ফিরিয়ে দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে চালক সোহল মিয়া নিজের গাড়িটি 'প্রাইভেট' দাবি করে মোহাম্মদপুর যেতে ৪৫০ টাকা ভাড়া হাঁকান।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে ১৩ হাজার। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন হাজার গাড়ি প্রাইভেট লিখে প্রতারণা করছে যাত্রীদের সঙ্গে।
ঢাকা মহানগর অটোরিকশা ব্যবসায়ী-মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ ভুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ থেকে আসা প্রায় দুই হাজার প্রাইভেট অটোরিকশা রাজধানীতে ভাড়ায় চলছে।
জাল লাইসেন্স : জানা গেছে, গাড়ি চালানোর পরীক্ষা নেওয়ার বোর্ড সক্রিয় না থাকায় বিআরটিএর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, দালালদের সিন্ডিকেট এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের চাপে দেওয়া হচ্ছে লাইসেন্স। কয়েক দিন আগে মিরপুর কার্যালয়ে গেলে দালাল ইকরাম আলীসহ অন্যরা জানান, শুধু সংস্থার মিরপুর অফিস থেকেই দিনে গড়ে কমপক্ষে ৭০০-৮০০ জাল লাইসেন্স বের হচ্ছে।
নীতি ছাড়াই চলছে : যুগোপযোগী আইন না থাকায় বিআরটিএ অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নেও সংস্থাটি নীরব। বিআরটিএ প্রতিষ্ঠার প্রধান আইনি ভিত্তি মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩। মোটরযান ও ট্রাফিক ব্যবস্থা এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অধ্যাদেশের ১৭৭টি ধারা ও উপধারায় মোটরযান আইন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, মোটরযান মালিক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের সড়ক ও জনপরিবহন বিষয়ক স্বার্থ, পরিবহনে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় সকল আইন/বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও বাতিলের একক ক্ষমতা বিআরটিএকে দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি লঘু। শ্রমিক ও মালিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই এতে। বিশেষজ্ঞ ও পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হলেও দুই দশকেও এই অধ্যাদেশ হালনাগাদ করা হয়নি। ২০০৩ সালে এটি হালনাগাদ করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আট বছর এটি ফাইলবন্দি থাকে। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের একটি প্রকল্পের অধীনে নতুন এই অধ্যাদেশের আদলে সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক অধ্যাদেশ-২০১১-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি কবে চূড়ান্ত করা হবে এ বিষয়ে বিআরটিএ কিছুই জানে না। এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই আইনের খসড়ার ওপর মতামত সংগ্রহ চলছে। এরপর প্রক্রিয়া শেষে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি।'
সাত বছরে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : বিআরটিএতে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আটটি খাতে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মোটরযান লাইসেন্স, মোটরযান কর, নিবন্ধন, মালিকানা বদলি, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন, রোড পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মোটর ড্রাইভিং স্কুল নিবন্ধন, ইনস্ট্রাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, প্রাক রেজিস্ট্রেশন পরিদর্শন ফি বাবত ভুয়া রসিদ ও টোকেনের মাধ্যমে বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি উপকমিটি বিষয়গুলোর তদন্ত করেও কিনারা পায়নি। ছয় মাস ধরে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান দুদকের উপপরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি বিআরটিএর নারায়ণগঞ্জ অফিসে গিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছি, বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ির আয়কর আদায় করা হলেও তা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের পকেটে পুরেছেন কর্মকর্তারা। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ ধরনের কয়েকটি দুর্নীতির কাগজপত্রও আমরা পেয়েছি।' তার মতে, দুর্নীতি রোধ করলে বিআরটিএ থেকে সরকার বছরে আরো ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারত।

No comments

Powered by Blogger.