ডিএসইতে সাড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

দরপতনের বৃত্ত থেকে কিছুতেই যেন বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নানা প্রচেষ্টাও বাজারে প্রাণ ফেরাতে পারছে না। তাদের সব ধরনের উদ্যোগই বিফলে যাচ্ছে। দিন দিন বাজার খারাপ হচ্ছে। তা ছাড়া দৈনিক লেনদেন কমার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও কমছে।
দরপতন ঠেকাতে ঈদের আগে তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের এক ও অভিন্ন অভিহিত মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দেয় এসইসি। ওই সিদ্ধান্তের পর টানা দুই কার্যদিবসে বাজারে তার বেশ ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। কিন্তু এরপর শবে কদর, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদুল ফিতরের জন্য টানা নয় দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। বন্ধের পর লেনদেন শুরু হলে ফের দরপতনের ধারায় ফিরে যায় শেয়ারবাজার।
বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন ক্রেতা পক্ষ বেশ দুর্বল। আগের মতো ক্রেতা নেই বাজারে। যাঁরা আছেন, তাঁরা ছোট পুঁজির ক্রেতা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও খুব বেশি সক্রিয় নন। তার ওপর নগদ অর্থের সংকট এখনো প্রবল। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন; যার প্রভাবে বাজার দরপতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন গতকাল বৃহস্পতিবার নেমে এসেছে ২৪১ কোটি টাকায়। এটি গত সাড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সর্বশেষ ডিএসইতে ২০৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
লেনদেন কমার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়ছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে এখন প্রবল তারল্যসংকট রয়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তো আছেই। বাজারে এখন ক্রেতা পক্ষ খুবই দুর্বল। আবার একটানা দরপতনের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে অনেকেই শেয়ার ধরে রেখেছেন।’
সাময়িকভাবে এই চিত্র কিছুটা হতাশাজনক হলেও বাজারের জন্য এটি খুবই ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে মনে করেন মোহাম্মদ এ হাফিজ। তাঁর মতে, এখন যদি বাজারে কেউ বিনিয়োগ করেন, তাঁর লোকসানের ঝুঁকি খুবই নগণ্য।
মোহাম্মদ এ হাফিজ আরও বলেন, ‘বাজারকে স্থিতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হতে হবে।’
বাজারচিত্র: গত বুধবার দর বাড়লেও সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দরপতন দিয়েই লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসইতে দিন শেষে সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৭ পয়েন্টে। এই দিন লেনদেন হওয়া ২৫১টি কোম্পানির মধ্যে ১৫৬টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ৮০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দাম। লেনদেন কমেছে আগের দিনের চেয়ে ৬৭ কোটি টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল ৬৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ১৭৭ কোম্পানির মধ্যে ১২৮টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ৩৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির দাম। দিন শেষে সিএসইতে ৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।

No comments

Powered by Blogger.