যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিমানঘাঁটি ছেড়ে দিতে বলেছে পাকিস্তান

যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের প্রত্যন্ত মরু এলাকায় অবস্থিত একটি বিমানঘাঁটি ছেড়ে দিতে বলেছে দেশটির সরকার। ওই ঘাঁটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমেদ মুখতার রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত শামসি বিমানঘাঁটি ছেড়ে দিতে বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর কোনো মার্কিন যুদ্ধবিমান শামসি থেকে উড়বে না। সেখানে যদি কোনো যুদ্ধবিমান থাকে, তবে তা পাকিস্তানের।’ তিনি জানান, ঘাঁটি থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে কিছুটা সময় চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন অভিযানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। পাকিস্তান এরই মধ্যে সে দেশে অবস্থানকারী মার্কিন সেনার সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমাতে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের জন্য যৌথ সহযোগিতা তহবিল (সিএসএফ) সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে।
মন্ত্রী বলেন, ওসামা বিন লাদেনের আত্মগোপনের বিষয়ে শুধু যে ইসলামাবাদ কিছু জানত না, এমন নয়; যুক্তরাজ্যও এ বিষয়ে ছিল অন্ধকারে। তিনি বলেন, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থানে নেই। তবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করতে চায় ইসলামাবাদ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিএসএফ সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার পরও ইসলামাবাদ সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত রেখেছে। যদিও পাকিস্তানের পক্ষে এ লড়াই দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।
আহমেদ মুখতার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন কেরি ইসলামাবাদ সফরকালে আশ্বস্ত করেছেন, ইসলামাবাদের পরমাণু সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে নেই। মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের পরমাণু সম্পদ নিরাপদে আছে। কোনো পক্ষই হুমকির মুখে নেই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দিকে থেকে কারও ওপর নির্ভরশীল হতে চায় না; বরং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি কিংবা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক লে. জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা দেশটির জন্য অপরিহার্য।
আহমেদ মুখতার বলেন, সুজা পাশা নিজেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পার্লামেন্ট তাঁকে স্বপদে দায়িত্ব পালন করে যেতে আহ্বান জানায়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তালেবান নেতা মোল্লা ওমর কোথায় আত্মগোপন করে আছেন, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে তাঁর ধারণা, মোল্লা ওমর একসময় পাকিস্তানে আত্মগোপন করে থাকলেও লাদেন হত্যার পর তিনি আফগানিস্তান চলে গেছেন।
ওসামা বিন লাদেনের স্ত্রী ও সন্তানেরা পাকিস্তানি সরকারের হেফাজতে রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁরা যে যে দেশে যেতে চান, সরকার সেখানেই তাঁদের পাঠাবে।
রুশ-পাকিস্তান নিরাপত্তা সহযোগিতা-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাশিয়ায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে রাশিয়া বেশ আগ্রহী।

No comments

Powered by Blogger.