লিবিয়াফেরত কর্মজীবীদের জন্য কাজের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে

লিবিয়া থেকে প্রত্যাগত কর্মজীবী মানুষের সাহায্যার্থে একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। পাশাপাশি লিবিয়া থেকে দেশে আসার পর তাঁদের জন্য সাময়িকভাবে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে ‘উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিরাজমান পরিস্থিতি’ নিয়ে এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। এ সময় নেতারা বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করেছে। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই লিবিয়া থেকে ফিরে আসা মানুয়ের পাশে তাঁরা দাঁড়াতে চান।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রধান অতিথি ছিলেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, লিবিয়া থেকে যাঁরা দেশে ফিরে আসছেন, তাঁদের পুনর্বাসনে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার গত দুই বছরে মাত্র দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অথচ বায়রার সদস্যরা প্রতিবছর পাঁচ-ছয় লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন যাঁদের ৯০ শতাংশই স্বল্পশিক্ষিত।
জনশক্তি রপ্তানিকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে তিনি সাধারণ শিক্ষার মতো কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
স্বাগত বক্তব্যে এ কে আজাদ বলেন, ‘ব্যবসায়ী সম্প্রদায় লিবিয়াফেরত কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে চায়। একই সঙ্গে জানিয়ে দিতে চাই, দেশে ফিরে তারা না খেয়ে মারা যাবে না। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।’
তপন চৌধুরী বলেন, বিদেশে কর্মজীবীদের পাঠানো হাজার কোটি ডলারেরর কারণে আজ অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য সফলভাবে করতে পেরেছেন। তাই লিবিয়া থেকে যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁদের জন্য অনুকম্পা নয়, বরং তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দিতেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রবাসীআয় বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজে বের করা দরকার। কারণ, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীআয় বেড়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ। প্রবাসী আয় না বাড়লে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের বেশি হলেও খাদ্যপণ্য ও তেলের দাম বাড়ায় আমদানিব্যয় অনেক বাড়ছে। তাই বিদেশি ঋণ না পেলে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে। এতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে ও পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব এলাকার লোক বেশি বিদেশে থাকেন সেই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো।
বিজিএমইএর সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের ২৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি অব্যবহূত পড়ে রয়েছে। দক্ষ লোক পেলে এ খাতে আরও ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী তাঁর প্রতিষ্ঠানে লিবিয়াফেরত ১০০ জনের এবং আরেক পরিচালক হারুন-অর-রশীদ ৫০০ জনের কর্মসংস্থান করার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. জসিমউদ্দিন, সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার, বায়রার ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.