জেগে ছিল ঢাকা

আয়ারল্যান্ডের তখনো দুই উইকেট বাকি, উল্লাসটা শুরু হয় তখনই। ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়ে অসংখ্য ক্রিকেটপাগল মানুষ। শফিউলের বলে আয়ারল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান র্যাঙ্কিনের পতন ঘটতে না ঘটতেই ঢাকা পরিণত হয় উত্সবের নগরে। বিজয় এসেছে, প্রতিশোধের বিজয়, স্বস্তির বিজয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার বিজয়। সারা রাত ধরে ঢাকায় চলেছে এই বিজয় উত্সব। বিজয়ের উন্মাদনায় সারা রাত জেগে ছিল ঢাকা।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাতভর চলেছে বিজয়ের উত্সব। সে উত্সবে যোগ দেয় সর্বস্তরের মানুষ। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় ঢাকার মহাসড়ক থেকে অলিগলি। যে যেভাবে পেরেছে উত্সব করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা কণ্ঠ ফাটিয়ে ঢাকার আকাশে-বাতাসে বিজয়ের ধ্বনি তুলেছে। ভুভুজেলার কর্ণবিদারী শব্দ সে বিজয়ের আনন্দে যোগ করে নতুন উন্মাদনা। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর নাচগানে রাতটি হয়ে ওঠে শুধুই ঢাকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন হল, পুরান ঢাকা, নীলক্ষেত, শাহবাগ, মিরপুর, উত্তরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতভর চলেছে উল্লাস মিছিল। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও সাইকেলে করে মানুষ নেমে আসে রাজপথে। আর যাদের বাহন ছিল না, তারা পায়ে হেঁটেই যোগ দেয় আনন্দ উত্সবে। সবার মুখেই ছিল ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ স্লোগান।
আয়ারল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জিতে দেশবাসীর এই উল্লাস আসলেই একটু অদ্ভুত। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান কিংবা ভারত হলেও না হয় একটা কথা ছিল। আসলে কালকের জয়টা ছিল নিশ্চিত পরাজয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এক বিজয়গাথা। দর্শকের আনন্দটাও তাই অনেকটাই নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দের মতোই। সেই সঙ্গে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ ও ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ তো ছিলই।
এই প্রতিশোধের আনন্দেই শেষ রাত পর্যন্ত চলেছে দর্শক-সমর্থকদের আনন্দ। নগরের প্রতিটি মোড় থেকে ভেসে এসেছে বিজয়ের প্রতিধ্বনি। ভোরে শ্রান্ত দেহে মানুষ ফিরেছে, কিন্তু তখনো তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের স্মিত হাসি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতেছে, আর কী লাগে !

No comments

Powered by Blogger.