আফ্রিদির সমালোচনায় সাবেকরা

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর অধিনায়ক হিসেবে শহীদ আফ্রিদির অবস্থান আরও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। এমনিতেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য পাকিস্তান স্কোয়াডটি ঘোষিত হয়েছে কোনো অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নামের উল্লেখ ছাড়াই। আফ্রিদির নেতৃত্বে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ওয়ানডে পারফরম্যান্স বোধহয় তাঁর ব্যাপারে নির্বাচকদের একটি সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করবে।
এমনিতেই পাকিস্তানি ক্রিকেটের মোড় কখন কোনদিক ঘুরে যায়, সেটা বোঝা বেশ কষ্টসাধ্যই। নয়তো যে মিসবাহ-উল-হক কিছুদিন আগেও আলোচনার কোনো বিষয়ই ছিলেন না, তিনি কিনা বিশ্বকাপের আগ দিয়ে অধিনায়ক পদের জন্য আফ্রিদির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী!
‘ঝামেলাটা’ বেঁধেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পরপরই। এর আগে নির্বাচকেরা পাকিস্তান টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে মিসবাহর নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর নির্বাচকেরা তো বটেই অনেক সাবেক খেলোয়াড়ই অধিনায়ক হিসেবে মিসবাহর ‘প্রেমে’ রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছেন। অপ্রকাশিত সূত্রের বরাত দিয়ে অনেক সংবাদমাধ্যমই জানিয়েছে, পাকিস্তান দলেও নাকি বর্তমানে ‘আফ্রিদি গ্রুপ’ ও ‘মিসবাহ গ্রুপ’ নামের দুটো উপদল যথেষ্ট সক্রিয়।
এমনই এক সময়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে এমন হার, সেই সঙ্গে ম্যাচ শেষে পেসার শোয়েব আখতার সম্পর্কে একটি অসতর্ক মন্তব্য আফ্রিদিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ‘আফ্রিদি-বিরোধী’ সাবেকদের কাঠগড়ায়।
এই দলে রয়েছেন জহির আব্বাস, আবদুল কাদির, মুদাসসর নজর ও আমির সোহেলের মতো সাবেক তারকারা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হারার পর, আফ্রিদি খোলাখুলিভাবেই শোয়েব আখতারের সমালোচনা করেন। আর এই ব্যাপারটিই একদম সহ্য করতে পারছেন না আবদুল কাদির। কাদির বলেছেন, ‘যে অধিনায়ক নিজেই বাজে শট খেলে আউট হয়েছে, সে কীভাবে অন্যের খেলা নিয়ে মন্তব্য করে।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর মনে হয়, আগে নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’ আবদুল কাদির মনে করেন, আফ্রিদির এই মন্তব্য সংগত কারণেই দলের কোনো খেলোয়াড়ই পছন্দ করবে না।
আমির সোহেল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই হারকে বিশ্বকাপের আগে একটি বড় আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘এই হার বিশ্বকাপের আগে দলটা অগোছালো ভাব ও প্রস্তুতিহীনতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’
মুদাসসর নজরের কাছে পুরো দলের শরীরী ভাষাতেই সমস্যা দেখছেন। ‘আমি জানি না, তবে আমার মনে হয়েছে, দলটার কোথায় যেন একটা সমস্যা রয়েছে। দলটির মধ্যে উদ্দীপনার অভাবও লক্ষ্য করেছি।’
তবে জহির আব্বাস কাদির, সোহেল ও নজরের মতো এতটা কঠোর মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, ‘এখনো পাঁচটি ওয়ানডে বাকি। পাকিস্তান দলের এই সিরিজে ফেরার সামর্থ্য রয়েছে।’ তবে নিউজিল্যান্ডের মতো দুর্বল বোলিং আক্রমণের সামনে বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনীটাকেই মেনে নিতে পারছেন না আব্বাস। তিনি বলেছেন, উইকেট দ্রুতগতির হোক কিংবা বাউন্সি হোক, পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা লজ্জাজনক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করেছেন। ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচন ভালো ছিল না। দায়িত্ববোধের অভাবও ছিল লক্ষণীয়।’
তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াড-ঘোষিত হলেও অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা না করে পিসিবি ও নির্বাচকেরা যে ভুলপথে হাঁটছেন, তা জানাতে ভোলেননি মুদাসসর নজর। তিনি বলেছেন, ‘যেখানে অন্য দলগুলো একটি পদ্ধতির অধীনে নিজেদের সঁপে দিয়েছে, সেখানে পিসিবির অন্যপথে হাঁটাটা ঠিক হচ্ছে না। সবকিছুর একটা নিয়ম-নীতি রয়েছে।’
নিয়ম-নীতি থাকলেও পাকিস্তানের ক্রিকেটে অনিয়মটাই যে নিয়ম, সেটা তো আরও ভালো করেই জানেন এই সাবেকরা। কারণ, তাঁরাও তো অতীতে কোনো না কোনোভাবে অনিয়মের শিকার।

No comments

Powered by Blogger.