ফের জোট গড়তে যাচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূল

কলকাতা পৌর করপোরেশনসহ রাজ্যের ৮১টি পৌরসভার নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ে এবার রাজ্যজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া আরও জোরদার হয়েছে। নির্বাচনের এই ফল আগামী ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার জন্য সুফল বয়ে আনার ইঙ্গি দিচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজ্যবাসী আরও একটি বার্তা দিয়েছে, বামফ্রন্টকে রাজ্যপাট থেকে হটাতে হলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই তৃণমূলের জন্য। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করে তৃণমূলের যে এককভাবে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করা কঠিন হবে, সেটি এখন তৃণমূলের নেতারাও বুঝতে পারছেন। কেননা, কলকাতায় কংগ্রেস খারাপ করলেও উত্তরবঙ্গে দলটি মোটামুটি ভালোই ফল করেছে। আর এই দিকটি বুঝেই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলেই দেন যে তাঁরা ফের জোট গড়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কেশব রাও বলেছেন, ত্রিশঙ্কু বিধানসভাগুলোতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে পৌর বোর্ড গড়বে। কংগ্রেস-তৃণমূলের এই জোট বিধানসভার নির্বাচনেও অটুট থাকবে। এই জোট গড়ার পক্ষে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মত দিয়েছেন। কারণ, সর্বশেষ যে হিসাব তাতে দেখা গেছে, এখনো ২৮টি পৌরসভার ফলাফল ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। এখানে কংগ্রেস বা তৃণমূলের কারোর পক্ষে এককভাবে বোর্ড গড়া সম্ভব হবে না। এখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল পরস্পরকে সমর্থন না জানালে বোর্ড গঠন করা কঠিনই হবে। যদিও ৮১টি পৌরসভার মধ্যে তৃণমূল এককভাবে জিতেছে ২৪টি, বামফ্রন্ট ১৮টি ও কংগ্রেস সাতটি পৌরসভায়। আর টাই হয়েছে চারটি পৌরসভায়।
ভোটের ফলাফল গণনার পর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে জানান, এবার তৃণমূল জয় পেয়েছে ৮২৪টি ওয়ার্ডে, আর কংগ্রেস জয় পেয়েছে ৩০৭টি ওয়ার্ডে। অন্যদিকে বামফ্রন্ট জয় পেয়েছে ৫৬৩টি ওয়ার্ডে। এর মধ্যে সিপিআইএম ৪৮৪, সিপিআই ২৪, ফরোয়ার্ড ব্লক ৪১ ও আরএসপি ১৪টিতে। এ ছাড়া বিজেপি ১০টি, এসইউসিআই চারটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে।
কে হচ্ছেন কলকাতার মেয়র?
সর্বশেষ ২০০০ সালে কলকাতা পৌর করপোরেশনের দখল পেয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তখন মেয়র হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এরপর ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। মেয়র হন বিকাশ ভট্টাচার্য। আর ২০১০ সালে ফের ক্ষমতায় আসে এককভাবে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এবার কে হচ্ছেন কলকাতার মেয়র, তাই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জল্পনাকল্পনা। তবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মেয়র পদে বসানো হবে না। বসানো হবে দলের কর্মীকে। নির্বাচনের আগে শোনা গিয়েছিল, করপোরেশনে বিরোধীদলীয় নেতা জাভেদ খান হতে পারেন মেয়র। কিন্তু তিনি এবার হেরে যান ভোটে। তৃণমূল এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি কাকে বসানো হবে মেয়রের চেয়ারে। তবে সংখ্যালঘু কাউকে মেয়র করার চিন্তা-ভাবনা আছে তৃণমূলের। সে ক্ষেত্রে উঠে এসেছে ববি হাকিমের নাম। ববির কলকাতায় সুনাম রয়েছে। আরও উঠে এসেছে জাভেদ খানের স্ত্রী রাফাত জাভেদের নামও। যদি কোনো মহিলাকে মেয়র পদে বসানো হয়, তবে রাফাত জাভেদের সঙ্গে উঠে এসেছে আরও একজনের নাম, তিনি হলেন শশী পাঁজা। তৃণমূলের প্রয়াত নেতা অজিত পাঁজার পুত্রবধূ। আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্য থেকে যদি কাউকে মেয়র পদে বসানো হয়, সে ক্ষেত্রে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম।

No comments

Powered by Blogger.