গল্প- এই গল্পটা আমার মায়ের by মাহবুব রেজা
অলংকরণ: মাসুক হেলাল |
আমাদের
বাড়ির সামনে প্রাচীনকালের একটা বটগাছ। বেশ ডালপালা, লতাপাতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। দূর থেকে বটগাছটাকে দেখলে যে কেউই বেশ সমীহ
করবে। আর ভাববে, ওরেব্বাবা! এত্ত বড় ছাতা তো বাপের জন্মেও দেখিনি!
ছাতা!
হ্যাঁ, বড়সড় বটগাছকে দূর থেকে দেখলে অমন ছাতাই মনে হয়। বটগাছ থেকে দিনমান একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে লুটিয়ে পড়ে আমাদের সামনের ঘরে। আমরা যখন সেই ঘরে থাকি তখন মাকে আর কষ্ট করে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয় না। ঠান্ডা হাওয়া আমাদের শীতল করে তোলে। আমরা তখন সামনের ঘরের বিছানায় হাঁ করে শুয়ে থাকি।
বর্ষার সময় সেই হাওয়া যেন আরও প্রাণ পায়। সারা দিন শোঁ শোঁ করে হাওয়া বয়ে যায়। আমি তখন হাওয়ার ভেতর ডুবে থাকি। আমার ভেতর তখন প্রশ্ন জাগে, ‘আচ্ছা, বটগাছের ঠান্ডা হাওয়া আমাগো ঘর থিকা কই মিলায়া যায়!’
একদিন আমি বোকার মতো মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা, বটগাছের ঠান্ডা হাওয়া আমাগো বাড়ি থিকা কই চইলা যায়?’
আমার কথা শুনে মা ছোট মেয়ের মতো হি হি করে হাসলেন। বললেন, ‘তর নানিগো বাইত।’
মার কথা শুনে আমি তো অবাক!
নানিগো বাইত যায় মানি? মা বলে কী!
আমি ভাবলাম, আমার কথা হয়তো মা বুঝতে ভুল করেছেন। মা বুঝি আমার কথা ঠিকমতো শোনেননি।
হাওয়া আবার নানিরবাড়ি যায় কীভাবে!
হাওয়া কি নানির বাড়ি চেনে, যে গুটিগুটি পায়ে চলে যাবে নানিবাড়ি!
আমি আবার মাকে বললাম, ‘মা বটগাছ থিকা যে হাওয়া আমাগো বাড়ির ওপর দিয়া যায় হেই হাওয়া কই যায়?’
মা এবার আমার কথার জবাবে আগের মতো নানির বাড়ি বললেন না। বললেন, ‘এই হাওয়া সোজা যাইব বিক্রমপুর’—বলে মা দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করলেন। আমার মনে হলো, মা যেন তাঁর হাত দুটোকে বিক্রমপুরের দিকে নিশানা করে রেখেছেন।
এবার মায়ের কথা সত্যি সত্যিই আমার বিশ্বাস হলো। সন্ধ্যার পর বাবা ঘরে এলে বাবাকেও একই প্রশ্ন করলাম। প্রশ্ন শুনে বাবা ভালো করে আমাকে দেখলেন। মা তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত।
আমার কথা শুনে বাবা বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আগে বল, তোর এই প্রশ্নে বেগম সাহেবা কী উত্তর দিলেন।’ মা সামনে না থাকলে বাবা মাকে ‘বেগম সাহেবা’ বলে সম্বোধন করেন।
‘মায় প্রথমবার কইল, এই হাওয়া যায় তগো নানিগো বাইত। হেরপর কইল বিক্রমপুর।’
বিক্রমপুর শুনে বাবা শব্দ করে হাসলেন, ‘সবকিছুতে তোর মা খালি বিক্রমপুর বিক্রমপুর করে। এইটা হইল তোর মার একটা রোগ।’
বাবার কথা শেষ হলো না। তার আগেই ঘরের দরজায় মায়ের ছায়া এসে পড়ল।
মাকে দেখে বাবা ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।
মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন, ‘তর বাপে কী কয় রে?’
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করে কী যেন ইশারা করলেন। তারপর মাকে বললেন, ‘না...আমরা বাপ-মাইয়ায় মিল্যা বটগাছের গল্প করতাছি...।’
বাবার মুখে বটগাছের গল্প করতাছি শুনে মা মেজাজ খারাপ করে উত্তর করলেন, ‘সন্ধ্যার সময় কই মাইয়ারে লইয়া পড়াইতে বইবা। না, তিনি মাইয়ারে শুনাইতাছেন বটগাছের গল্প।’ এ কথা বলে মা গটগট করে চলে গেলেন।
মা চলে যাওয়ার পর বাবা আর আমি হো হো করে হাসতে থাকি।
ছাতা!
হ্যাঁ, বড়সড় বটগাছকে দূর থেকে দেখলে অমন ছাতাই মনে হয়। বটগাছ থেকে দিনমান একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে লুটিয়ে পড়ে আমাদের সামনের ঘরে। আমরা যখন সেই ঘরে থাকি তখন মাকে আর কষ্ট করে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয় না। ঠান্ডা হাওয়া আমাদের শীতল করে তোলে। আমরা তখন সামনের ঘরের বিছানায় হাঁ করে শুয়ে থাকি।
বর্ষার সময় সেই হাওয়া যেন আরও প্রাণ পায়। সারা দিন শোঁ শোঁ করে হাওয়া বয়ে যায়। আমি তখন হাওয়ার ভেতর ডুবে থাকি। আমার ভেতর তখন প্রশ্ন জাগে, ‘আচ্ছা, বটগাছের ঠান্ডা হাওয়া আমাগো ঘর থিকা কই মিলায়া যায়!’
একদিন আমি বোকার মতো মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা, বটগাছের ঠান্ডা হাওয়া আমাগো বাড়ি থিকা কই চইলা যায়?’
আমার কথা শুনে মা ছোট মেয়ের মতো হি হি করে হাসলেন। বললেন, ‘তর নানিগো বাইত।’
মার কথা শুনে আমি তো অবাক!
নানিগো বাইত যায় মানি? মা বলে কী!
আমি ভাবলাম, আমার কথা হয়তো মা বুঝতে ভুল করেছেন। মা বুঝি আমার কথা ঠিকমতো শোনেননি।
হাওয়া আবার নানিরবাড়ি যায় কীভাবে!
হাওয়া কি নানির বাড়ি চেনে, যে গুটিগুটি পায়ে চলে যাবে নানিবাড়ি!
আমি আবার মাকে বললাম, ‘মা বটগাছ থিকা যে হাওয়া আমাগো বাড়ির ওপর দিয়া যায় হেই হাওয়া কই যায়?’
মা এবার আমার কথার জবাবে আগের মতো নানির বাড়ি বললেন না। বললেন, ‘এই হাওয়া সোজা যাইব বিক্রমপুর’—বলে মা দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করলেন। আমার মনে হলো, মা যেন তাঁর হাত দুটোকে বিক্রমপুরের দিকে নিশানা করে রেখেছেন।
এবার মায়ের কথা সত্যি সত্যিই আমার বিশ্বাস হলো। সন্ধ্যার পর বাবা ঘরে এলে বাবাকেও একই প্রশ্ন করলাম। প্রশ্ন শুনে বাবা ভালো করে আমাকে দেখলেন। মা তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত।
আমার কথা শুনে বাবা বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আগে বল, তোর এই প্রশ্নে বেগম সাহেবা কী উত্তর দিলেন।’ মা সামনে না থাকলে বাবা মাকে ‘বেগম সাহেবা’ বলে সম্বোধন করেন।
‘মায় প্রথমবার কইল, এই হাওয়া যায় তগো নানিগো বাইত। হেরপর কইল বিক্রমপুর।’
বিক্রমপুর শুনে বাবা শব্দ করে হাসলেন, ‘সবকিছুতে তোর মা খালি বিক্রমপুর বিক্রমপুর করে। এইটা হইল তোর মার একটা রোগ।’
বাবার কথা শেষ হলো না। তার আগেই ঘরের দরজায় মায়ের ছায়া এসে পড়ল।
মাকে দেখে বাবা ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।
মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন, ‘তর বাপে কী কয় রে?’
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করে কী যেন ইশারা করলেন। তারপর মাকে বললেন, ‘না...আমরা বাপ-মাইয়ায় মিল্যা বটগাছের গল্প করতাছি...।’
বাবার মুখে বটগাছের গল্প করতাছি শুনে মা মেজাজ খারাপ করে উত্তর করলেন, ‘সন্ধ্যার সময় কই মাইয়ারে লইয়া পড়াইতে বইবা। না, তিনি মাইয়ারে শুনাইতাছেন বটগাছের গল্প।’ এ কথা বলে মা গটগট করে চলে গেলেন।
মা চলে যাওয়ার পর বাবা আর আমি হো হো করে হাসতে থাকি।
No comments