অদ্ভুত লোকটি by পূরবী চক্রবর্ত্তী

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
শ্রাবণ। শ্রাবণ মাসে জন্ম হওয়ায় তার এই নাম। সে এখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। এরই মধ্যে সে খুব বিখ্যাত হয়ে গেছে। তার একটাই কারণ, সে ভালো গল্প লিখতে পারে। অবশ্যি সেটা সায়েন্স ফিকশন। তার পাঠানো একটা গল্প সম্প্রতি বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক দৈনিকে বেরিয়েছে। বন্ধুদের মধ্যে এটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।
রাকিব এই ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে। ক্লাসে সে অন্যদের নামে নালিশ করে খুবই মজা পায়। আগেরবার সায়েন্স ফেয়ারে ফার্স্ট হওয়ায় তার দম্ভ। সে বলল, ‘কিরে শ্রাবণ, গল্পটা কার থেকে নকল করলি?’
শ্রাবণ: ‘নকল কেন করব? এটা আমারই লেখা।’
রিয়া: ‘আসলেই গল্পটা সুন্দর। শেষে যখন উত্তেজনা দিয়ে রিও পৃথিবীতে ফিরে আসে, তখন রোমাঞ্চ সৃষ্টি হয়।’
শ্রাবণ: ‘থ্যাংকস।’
এমনিতেই আফসানা ম্যাডাম শ্রাবণের প্রশংসা করেন, আজ একটু বেশিই করলেন। রাকিবের খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু ও কিছু বলল না।
স্কুল ছুটি হয়েছে। শ্রাবণ ও রাকিব একসঙ্গে আসছে।
রাকিব: ‘দোস্ত! তুই তো ফেমাস হয়ে গেলি।’
শ্রাবণ: ‘তো!’
রাকিব: ‘এবার সায়েন্স ফেয়ারে তোকে ক্যাপ্টেন করা হবে।’
শ্রাবণ: ‘হুম। মনে মনে খুশিই হয়েছে।’
এবার রাকিব ডানের গলিতে ঢুকে গেল আর শ্রাবণ তার বাড়ির দিকে রওনা দিল। শ্রাবণের বাড়ি যেতে একটা পার্ক পড়ে। প্রজাপতি পার্ক। ও ভাবল, পার্ক থেকে ঘুরে আসি। হঠাৎ একটা অপরিচিত লোক ওর নাম ধরে ডাকল।
শ্রাবণ: ‘আপনি কে?’
লোক: ‘আমি রিও। আমার বাড়ি রাশিয়া।’
শ্রাবণ একটু বিব্রত: ‘জি...’
লোক: ‘অবাক হয়ো না। ওই যে কদিন আগে চাঁদে গিয়েছিলাম।’
শ্রাবণ: ‘আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন? হয়তো আপনি আমার লেখা পড়েছেন।’
লোক: ‘হুম পড়েছি! আমার মনে হয় তোমার গল্পে ভুল আছে।’
শ্রাবণ: ‘কী ভুল?’
লোক: ‘তোমার গল্পের শেষে আছে আমরা এলিয়েনের সাহায্য নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না।’
শ্রাবণ: ‘কেন?’
লোক: ‘শোনো। ওরা আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওরা চাইবে আমাদের নিয়ে রিসার্চ করতে।’
বাসায় গিয়ে শ্রাবণ এ কথাটা সবাইকে বলল। সবাই খুব খুশি ছিল বলে কেউ তেমন পাত্তা দিল না। সবাই বলল, লোকটা তোর গল্প পড়ে, তোর সঙ্গে মজা করেছে। তবে সে এ ব্যাপারে মেজো আপুকে বলল। ওর বড় আপু অর্পা থাকে ঢাকায়। সে কেমিস্ট হতে চায়। ওর তেমন সময় নেই। তবে মেজো আপুর হাতে অনেক সময়। সবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। সে বলল পার্কে গিয়ে আবার লোকটার সঙ্গে কথা বলতে।
পরদিন স্কুল ছুটির পর সে রাকিবকে সব বলল। রাকিব বাপারটা হাসাহাসি করে উড়িয়ে দিল। আজকেও শ্রাবণ গেল। লোকটা খুব বেঁটে। টাইট পোশাক পরা। আর সব সময় শ্রাবণের থেকে দূরে একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে। এদিনও তা-ই।
লোক: ‘তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।’
শ্রাবণ: ‘জি না।’
লোক: ‘তোমার আরও কয়েকটা ভুল ছিল।’
শ্রাবণ: ‘বলেন, শুনি।’
লোক: ‘তুমি সঠিক হিসাব দাওনি।’
শ্রাবণ: ‘কিসের?’
লোক: ‘ওই যে আদৌ মহাকর্ষ বল ওই এলিয়েনটার ওপর কাজ করবে কি না...’
শ্রাবণ: ‘হুম...’
পরদিন শ্রাবণ আবার গেল। প্রতিদিন লোকটা একটা করে ভুল বলে। কিন্তু শ্রাবণ তাকে বাসায় নিতে চাইলে আসে না।
এদিনও লোকটা ভুল ধরিয়ে দিল। এবার শ্রাবণ বাড়ির দিকে রওনা দিল। হঠাৎ মনে পড়ল যে সে বেঞ্চের ওপর তার স্কুলব্যাগ ফেলে এসেছে। সে আবার পার্কে গেল। গিয়ে সে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল।
‘রাকিব, এসব কী হচ্ছে?’ শ্রাবণ বলল। সে দেখল রাকিব লোকটার হাত-পা আলাদা করে ব্যাগে ভরছে। ওকে দেখে রাকিব হো হো করে হেসে ফেলল।
রাকিব: ‘ভয় পেলি নাকি?’
শ্রাবণ: ‘কী করছিস তুই?’
রাকিব: ‘বলছি। ও হলো আর থার্টিফোর। আমার নাসার গবেষক ছোট মামার আবিষ্কার। সায়েন্স ফেয়ারে ফার্স্ট হয়েছিলাম বলে খুশি হয়ে মামা আমাকে কিছু দিনের জন্য দিয়েছেন।’
শ্রাবণ: ‘কী?’
রাকিব: ‘তোর সঙ্গে একটু মজা করেছিলাম। আমি ভয়েস রেকর্ড করে ডিভাইসে দিয়েছিলাম। বল, আমার চিহ্নিত ভুলগুলো কেমন?’
শ্রাবণ: ‘তোর সঙ্গে কথা বলব না। তুই একটা...’
রাবিক: ‘গাধা?’
হা হা হা! দুজনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল।
দশম শ্রেণি, নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।
>>>২৯ এপ্রিল ২০১৬

No comments

Powered by Blogger.