কেন গ্রেসি ম্যানশনে উঠছেন মামদানি, সেখানে কি আছে?

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি আগামী জানুয়ারিতে ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডে অবস্থিত ঐতিহাসিক গ্রেসি ম্যানশনে উঠছেন। কয়েক বছর ধরে তিনি কুইন্সের যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সেখান থেকে এই বিলাসবহুল সরকারি বাসভবনে যাত্রা বহু পর্যবেক্ষকের নজর কেড়েছে। বিশেষত তিনি যেহেতু আবাসন ন্যায়সংগতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

১৭৯৯ সালে নির্মিত হলুদ রঙের ফেডারেল-স্টাইলের এই বাড়িটি ১৯৪২ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির সরকারি মেয়রের বাসভবন। এটি কার্ল শুর্ৎস পার্কের ভেতরে ইস্ট রিভারের কাছে অবস্থিত। মূল ভবনটিতে পাঁচটি শোবার ঘর, পাঁচটি বাথরুম এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত উচ্চ সিলিং ও ফায়ারপ্লেস রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে যোগ করা হয় সুসান ই. ওয়াগনার উইং, যেখানে সরকারি অনুষ্ঠান, সভা ও অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। পুরো কমপ্লেক্সের আয়তন এখন প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার বর্গফুট। ১৯৮১ সাল থেকে একটি পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব বাসস্থানটির রক্ষাণাবেক্ষণ করছে। যার লক্ষ্য এটি ‘জনগণের বাড়ি’ হিসেবে উন্মুক্ত রাখা।
গ্রেসি ম্যানশনের ভবনটি তৈরি করেছিলেন স্কটিশ-আমেরিকান শিপিং ব্যবসায়ী আর্চিবল্ড গ্রেসি। আর্থিক সংকটে তিনি বাড়িটি হারালেও তার নামই থেকে যায়। ১৮৯৬ সালে নিউইয়র্ক সিটি ভবনটিকে অধিগ্রহণ করে পার্কের অন্তর্ভুক্ত করে এবং পরে এটি বিভিন্ন সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর মধ্যে অস্থায়ীভাবে সিটি মিউজিয়ামের আবাসও ছিল। ১৯৪২ সালে পার্কস কমিশনার রবার্ট মোজেসের সুপারিশে মেয়র ফিয়োরেলো লা গুয়ার্ডিয়া এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র বাসভবন ঘোষণা করেন।

নিউইয়র্কে নির্বাচিত বেশিরভাগ মেয়রই গ্রেসি ম্যানশনে থেকেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এড কচ, ডেভিড ডিঙ্কিন্স, বিল ডে ব্লাসিও ও এরিক অ্যাডামস। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিলেন মাইকেল ব্লুমবার্গ। তিনি নিজের ব্যক্তিগত টাউনহাউজেই থাকতেন এবং গ্রেসি ম্যানশন কেবল আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করতেন।
৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি জানিয়েছেন, তিনি ও তার স্ত্রী শিল্পী রামা দুয়াজি জানুয়ারিতে গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সরকারি দায়িত্ব পালনে সুবিধা এবং আবাসন সাশ্রয়যোগ্যতা-কেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়ার স্বার্থেই সরকারি বাসভবনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন- ভাড়া অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসের অভিজ্ঞতাকে তিনি যে তার রাজনৈতিক বার্তার অংশ করেছিলেন, তা সরকারি প্রাসাদে উঠে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে।

গ্রেসি ম্যানশন বহুবার বিভিন্ন বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়েছে। বিশেষ করে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে বাড়িটির সামনে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে। ২০২৩ সালে অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে মানবাধিকারকর্মীদের মুখোমুখি সংঘর্ষও ঘটে এখানেই। ২০২৩-২৪ সালে মেয়র এরিক অ্যাডামস যখন গৃহহীনদের ‘রাইট-টু-শেল্টার’ আইন সীমিত করার উদ্যোগ নেন, তখনও গ্রেসি ম্যানশনের সামনে বড় বিক্ষোভ হয়।
মামদানির প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শহরের আবাসন সংকট মোকাবিলা। তিনি একাধিক বছর ভাড়া-ফ্রিজ, ভাড়াটিয়া সুরক্ষাবৃদ্ধি, সামাজিক আবাসন সম্প্রসারণ এবং জমিদারদের জল্পনামূলক ক্রয়ের নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির হাউজিং অ্যান্ড ভ্যাকান্সি সার্ভে অনুযায়ী, শহরের ভাড়া-উপযোগী বাসস্থানের খালি থাকার হার মাত্র ১.৪১ শতাংশ। যা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মতে গভীর সংকটের ইঙ্গিত। এছাড়া ২৪ লাখ ভাড়া বাসার মধ্যে ৩৩ হাজার এখনও খালি। শহরটিতে মধ্যম রেঞ্জের বাসার ভাড়া প্রায় ৩৬০০ ডলার। আয়ের তুলনায় ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেশি। যেমন- ম্যানহাটনে গড় মাসিক আয় ৫১০০ ডলার, এক বেডরুম ভাড়া ৪২০০ ডলার। ব্রুকলিনে আয় ৩৪০০ ডলার, ভাড়া ২৮০০ ডলার।

https://mzamin.com/uploads/news/main/193607_Kaium-2.webp

No comments

Powered by Blogger.