বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বৃটিশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি
বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অর্থ দিয়ে খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ১ লাখ ৭৫ হাজার নারী ও কিশোরীর জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। এছাড়া যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকারদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থাও করা হবে। কুপার বলেন, এই নতুন বৃটিশ সহায়তা বাংলাদেশে থাকা পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী সেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা করবে। আমরা কাজ চালিয়ে যাব, যাতে সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষরা প্রয়োজনীয় সহায়তা, সুরক্ষা, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পায়।
২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের কারণে পালিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দেয়া এবং ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালে সেনা-সমর্থিত বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের পালানো শুরু হয়। পরে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর রাখাইনের আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত তীব্র হলে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট তীব্র হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, খুব শিগগিরই খাদ্য সহায়তা কমে গিয়ে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলারে নেমে আসবে, যা ক্ষুধা ও নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়িয়ে দেবে। তিনি দাতাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান দাতাদের আরও বেশি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং নতুন সম্ভাব্য দাতাদেরও উদার সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিতে হবে, না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বৃটেনের এই নতুন সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে আছে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় ৬ মিলিয়ন পাউন্ড, খাদ্যে ৬ মিলিয়ন, পানি ও স্যানিটেশনে ৪.২ মিলিয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবায় ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। বৃটিশ সরকার জানিয়েছে, এই উদ্যোগ তাদের বৈশ্বিক মানবিক প্রতিক্রিয়ায় নেতৃত্বের প্রমাণ এবং মিয়ানমারের সংকট মোকাবিলায় অঙ্গীকারের প্রতিফলন। নতুন এই সহায়তার ফলে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য বৃটেনের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ৪৪৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি।

No comments