মঙ্গলের উদ্দেশে বেজোসের ব্লু অরিজিনের সফল রকেট উৎক্ষেপণ

বহুজাতিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন তাদের শক্তিশালী নিউ গ্লেন রকেটের বাণিজ্যিক উদ্বোধনী মিশনে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ করেছে। নাসা এ রকেট দুটিকে মঙ্গল অভিযানে পাঠিয়েছে। প্রথমবারের মতো সাগরে ভাসমান বার্জে রকেটের বুস্টারটি নিখুঁতভাবে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে বলা হয়, বৈরী আবহাওয়ার ফলে উৎক্ষেপণ কার্যক্রম বিলম্ব হয়।  পরে বৃহস্পতিবার বিকেলের স্বচ্ছ আকাশে সাতটি বিই-৪ ইঞ্জিন জ্বলে উঠতেই রকেটটি প্রচণ্ড শব্দ ও ধোঁয়ার বিস্ফোরণে আকাশে উঠে যায়। প্রায় ১০ মিনিট পর প্রথম ধাপের বিশালতম বুস্টারটি ‘জ্যাকলিন’ নামের বার্জে নিখুঁতভাবে অবতরণ করে। যা ব্লু অরিজিনের পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

এদিন নাসার যমজ স্যাটেলাইট এসক্যাপক পিএডিই-কেও কক্ষপথে পাঠানো হয়, যা ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে নাসার প্রথম বৈজ্ঞানিক পেলোড পরিবহন। রকেটের উপরের ধাপ উৎক্ষেপণের প্রায় ২০ মিনিট পরই স্যাটেলাইট মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ব্লু অরিজিনের প্রধান নির্বাহী ডেভ লিম্প বলেন, আজ আমরা মিশন পূর্ণ করেছি এবং এতে সাফল্য অর্জন করেছি। দলকে নিয়ে আমি গর্বিত। এমন সাফল্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ইলন মাস্কও অভিনন্দন জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  এক্সের বার্তায় তিনি লেখেন, অভিনন্দন জেফ বেজোস এবং ব্লু অরিজিন দল!

এসক্যাপক পিএডিই-এর দুটি স্যাটেলাইট- ব্লু এবং গোল্ড আগামী ২২ মাসের যাত্রা শেষে ২০২৭ সালে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করবে। এরপর ১১ মাস ধরে তারা সৌর বাতাস ও ওই গ্রহের দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়া এবং মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ক্ষয় হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করবে।

স্যাটেলাইট দুটি ক্যালিফোর্নিয়ার রকেট ল্যাব নির্মাণ করেছে এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া। রকেটে আরও ছিল উপগ্রহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভায়াস্যাটের একটি সেকেন্ডারি পেলোড। যা পৃথিবীর উপরে কক্ষপথে টেলেমেট্রি ডেটা রিলে প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সেটিকেও সফল ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্লু অরিজিন বহু বছর ধরে নিউ গ্লেনকে তাদের ভবিষ্যতের কর্মযান হিসেবে গড়ে তুলছে। জন গ্লেনের নামে নামকরণ করা এই ভারী রকেটটি স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯-এর দ্বিগুণ থ্রাস্ট উৎপাদন করতে সক্ষম এবং ফ্যালকনের ভারী যান সমপরিমাণ শক্তি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি কার্গো বহনের সুবিধা রাখে।

নাসা এসক্যাপক পিএডিই মিশনের জন্য প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং নিউ গ্লেন উৎক্ষেপণের জন্য ব্লু অরিজিনকে ১৮ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। ব্লু অরিজিন এর আগে প্রধানত তাদের নিউ শেফার্ড সাবঅরবিটাল রকেট দিয়ে মহাকাশ পর্যটন পরিচালনা করত। এখন তারা কক্ষপথে পে-লোড পরিবহন, নাসার আর্টেমিস মিশনের জন্য চন্দ্র অবতরণযান এবং বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের মতো বৃহত্তর প্রকল্পে জোর দিচ্ছে।

তবে স্পেসএক্সের তুলনায় ব্লু অরিজিনের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। গত দুই বছরে স্পেসএক্স প্রায় ২৮০টি ফ্যালকন রকেট মিশন সম্পন্ন করেছে এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্টারশিপ রকেট নিয়ে আরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.