কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কাগজে সই করছে: নাহিদ ইসলাম
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। শ্রম কমিশন হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মানুষের জীবনের সঙ্গে যে যে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত, তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে।
সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য সবার ভালো ইন্টেনশন (উদ্দেশ্য) দেখতে পাননি তাঁরা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ফলে তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই শুরু করেছেন, এর পাশাপাশি তাঁদের যে অর্থনৈতিক রূপান্তরের লড়াই, যেটাকে তাঁরা বলছেন বৈষম্যবিরোধী সমাজব্যবস্থা, ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থার জন্য তাঁরা লড়াই করবেন। ছাত্র-শ্রমিকসহ পেশাজীবী সব মানুষ একত্রিত হয়ে এই লড়াই করবেন।
বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে মানবিক মর্যাদা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়নের গালগল্প শোনানো হয়েছে, যেই প্রবৃদ্ধির গল্প গল্প শোনানো হয়েছে, সেই কাঠামো থেকে দেশকে বের করতে হবে। বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে থাকতে হবে মানবিক মর্যাদা, একটি মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান, শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা। এই মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান ও একটি দায়-দরদের সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাঁদের লক্ষ্য।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তি আজ আত্মপ্রকাশ করছে। রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। অন্যদিকে, এই দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা সব সময় জানি, রাজপথের শক্তি জয়ী হয়। ইনশা আল্লাহ, জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনো শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। গার্মেন্টসে আগুন লাগছে। বস্তিতে আগুন লাগছে। কলকারখানায় আগুন লাগছে। শ্রমিক মারা গেলে দুই লাখ, তিন লাখ টাকায় জীবনের দাম নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য হয় না। শ্রমিকের শ্রমকে কেবল অর্থনীতি শোষণের কেন্দ্রে ভাবলে চলবে না। বাংলাদেশে যে লুটপাট হয়েছে, যে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেখান থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে যেতে হবে।
ফ্যাসিবাদী আমলে যেসব রাঘব ছিল, মাফিয়া অলিগার্ক ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এই রাঘব, মাফিয়া অলিগার্কদের ব্যবসা এখনো রক্ষা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেই মাফিয়াদের, যারা শ্রমিকদের এতকাল ধরে শোষণ করেছে। তাই তাঁরা সেই অলিগার্কি ব্যবস্থার পরিবর্তন চান।
অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকির। সদস্যসচিব শ্রমিকনেতা রিয়াজ মোর্শেদ। মুখ্য সংগঠক শ্রমিক নেতা আরমান হোসেন।
‘আমাদের অন্তর্ভুক্ত না করে কীভাবে এই সনদে স্বাক্ষর করবে তারা’
'আমাদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আমাদের অন্তর্ভুক্ত না করে কীভাবে এই সনদে (জুলাই সনদ) স্বাক্ষর করবে তারা। আমাদের আগেও শান্তি ছিল না, এখনো নাই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। '
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে এসব কথা বলেন ইমরান মিয়া। তিনি নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভের পর সকালে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেট টপকে ভেতরে ঢোকেন। মঞ্চের সামনে অতিথিদের চেয়ারে বসে স্লোগান দিতে থাকেন।
বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য সাজিয়ে রাখা চেয়ারে তাঁরা বসে আছেন। অনুষ্ঠানমঞ্চ ও অতিথিদের জন্য রাখা এই চেয়ারের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আন্দোলনকারীদের দাবি, জুলাই আন্দোলনে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসন বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিজেকে জুলাই যোদ্ধা বলে পরিচয় দেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ জুলাই সনদ মানি না। এই সনদে জুলাই যোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা আন্দোলন করতে গিয়ে পা হারিয়েছি, হাত হারিয়েছি, চোখ হারিয়েছি। অথচ আমাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের অনেকে হাসপাতালে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে। তাই আমাদের দাবি অবিলম্বে জুলাই সনদের সংশোধন করতে হবে।’
যাদের রক্তের ওপর জুলাই অভ্যুত্থান তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। ক্রাচে ভর দিয়ে আসা জিহাদ ইসলাম জানান তিনি জুলাই যোদ্ধা। তিনি বলেন, 'আমাদের এত জোরাজুরি করে ঢুকতে হবে কেন। আমাদের কি ইনভাইট করা উচিত ছিল না? ১৫/২০ হাজার চেয়ার দিতে পারত না?'
জুলাই সনদের সংশোধন বা পরিবর্তন না হলে অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলেন জিহাদ ইসলাম।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাবেন না বলে জানিয়েছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিনিধিরা এখানে আসছেন। তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনা হবে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
![]() |
| জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ। ছবি: প্রথম আলো |

No comments