ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলে আরও সমস্যা হবে, যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রুবিও বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া মানে যুদ্ধবিরতি অর্জনকে আরও কঠিন করে তোলা। তিনি ইসরাইলের পশ্চিম তীর দখলের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে এটি চূড়ান্ত নয়। তিনি বলেন, আমি আপনাদের শুধু এটুকুই বলতে পারি যে এটি সম্পূর্ণ অনুমানযোগ্য ছিল।
রুবিও আরও বলেন, আমরা এই দেশগুলোকে আগেই বলেছিলাম যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে না, কারণ শুধু সংবাদ সম্মেলন করে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তিনি এই অভিযোগও পুনরাবৃত্তি করেন যে পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে উন্নত করার প্রচেষ্টা গাজার প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসকে আরও উৎসাহিত করেছে।
রুবিও বলেন, যেদিন ফ্রান্স তাদের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে, সেদিনই হামাস আলোচনার টেবিল থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন ২২শে সেপ্টেম্বর একটি জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনের আহ্বান করেছেন, যেখানে তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। তিনি ফিলিস্তিনের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি এবং ইসরাইলের অনমনীয় মনোভাবের কারণে এমনটা করছেন।
বুধবার ইসরাইলের অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করার আহ্বান জানান। বেলজিয়াম, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ফরাসি উদ্যোগে যোগ দেওয়ার পরই তিনি এই মন্তব্য করেন। স্মোট্রিচ বলেন, এই পদক্ষেপ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দেবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২০ সালে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়। দেশটি তাৎক্ষণিকভাবে সতর্ক করে বলেছে যে দখল একটি রেড লাইন এবং এটি চুক্তির মারাত্মক ক্ষতি করবে। এই চুক্তিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে বিবেচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় তিনটি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) সহযোগিতা করার অপরাধে (?) ফিলিস্তিনের তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো আল-হক, প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর) এবং আল-মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস। সংগঠনগুলোকে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ‘স্পেশালি ডিজাইনড ন্যাশনালস অ্যান্ড ব্লকড পারসনস লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, সংগঠনগুলো ইসরাইলের সম্মতি ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর তদন্ত, গ্রেপ্তার ও বিচারের প্রচেষ্টায় সরাসরি যুক্ত। এর আগে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। তার প্রতিক্রিয়ায় আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
উল্লেখ্য, আল-হক সংগঠনটি রামাল্লাহভিত্তিক। আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরাইলি অপরাধের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আইনি লড়াইয়ে সক্রিয় তারা। পিসিএইচআর ও আল-মিজান হলো গাজাভিত্তিক নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে তারা ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ নথিভুক্ত করছে। তিনটি সংগঠন যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অত্যন্ত অমানবিক, বেআইনি ও গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, যখন আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে, তখন এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কাপুরুষোচিত ও অনৈতিক। কেবল মানবতার প্রতি সম্পূর্ণ অশ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিতে পারে।
মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী মোহসেন ফারশনেশানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, এগুলো ফিলিস্তিনের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনটি মানবাধিকার সংগঠন। দুঃখজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয়, (ট্রাম্পের) এই প্রশাসন প্রতিবারই ইসরাইলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। জুনে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আদ্দামীর-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সতর্ক করে বলে, এটি সংগঠনটির দৈনন্দিন কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে কঠিন করে তুলবে। জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন-এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়। একই সময়ে বাইডেন আমলে আরোপিত অবৈধ ইসরাইলি বসতি ও সহিংস সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

No comments