ঢাকায় যৌন নির্যাতনে অসুস্থ ছেলেশিশুটি এখন হাসপাতালে, ১ জন গ্রেপ্তার
শিশুটি নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় তার ওই আত্মীয় প্রথমে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশুসহায়তা হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯৮) কল করেন। শিশুটির পরিবার, পুলিশ ও ১০৯৮ নম্বরের তথ্য অনুসারে, শিশুটির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। শিশুটি টানা নির্যাতনের শিকার হলেও শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই তা জানাজানি হয়। পরে জানা যায়, পাশের ডিম ও ডাবের দোকানের দুই কর্মী হাসিবুর রহমান ও রিয়াজ নিয়মিত শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করতেন।
নির্যাতনের শিকার শিশুর ওই আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শনিবার রাতে দোকানের কেনাকাটা করতে বাজারে গিয়েছিলেন। তাঁর দোকানেও দুজন কর্মী ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাঁর আত্মীয় ওই শিশুটিকে আঘাত করা হয়েছে চোখে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আঘাত করার কারণ জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, ২০-২২ দিন ধরে হাসিবুর ও রিয়াজ হাসপাতালের পেছনে বাগানে নিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। সে বাধা দিলেও শোনেননি।
শিশুটির ওই আত্মীয় আরও বলেন, নির্যাতনে শিশুটির পুরুষাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার ওই দুজন আবার তাকে বাগানে নিয়ে যেতে চাইলে সে রাজি হয়নি। এরপরই তাকে আঘাত করেন ওই দুজন। আঘাতে তার চোখ লাল হয়ে যায়। আজ সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে মামলা করেন। পরে বিকেলে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় হাসিবুর রহমান নামের একজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আজ দুপুরে মামলার পর আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে আসামিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর ১০ ধারায় (যৌনপীড়ন ইত্যাদির দণ্ড) বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাঁর শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দিয়ে কোনো নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন, তাহলে সেটা হবে যৌনপীড়ন। এই অপরাধে ওই ব্যক্তি সর্বনিম্ন ৩ বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮–এর সমন্বয়ক চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু মেয়েশিশু নয়, ছেলেশিশুরাও যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি ট্রমার মধ্যে পড়ে। অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা ভবিষ্যতে মা–বাবা হওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই পরিবারগুলোকে ছেলেশিশুদের দিকেও সমান নজর রাখতে হবে। তারা কোনো ধরনের নির্যাতনের কথা বললে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তিনি জানান, এই শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় ১০৯৮ নম্বরে সহায়তা জানিয়ে কল দেন শিশুটির ভাই। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন এবং এ কাজে সহায়তা দিতে একজন সমাজকর্মীকে নিয়োজিত করেন।
![]() |
| শিশু নিপীড়ন। প্রতীকী ছবি |

No comments