নতুন ও ক্রমবর্ধমান শক্তিকেন্দ্র গড়ে উঠছে এশিয়ায়, হতে পারে মার্কিন শৃংখলার বিকল্প
ট্রাম্প বরাবরই কুচকাওয়াজ ও সামরিক প্রদর্শনীতে আকৃষ্ট হন। তিনি গত মাসে আলাস্কায় পুতিনকে স্বাগত জানান স্টেলথ বোম্বার ফ্লাইওভার দিয়ে। তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময় ফ্রান্সের বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেন এবং সম্প্রতি ওয়াশিংটনে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকীতে নিজেও সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজন করেন। তবে বেইজিংয়ের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও নিখুঁত মার্চপাস্টের বিপরীতে ট্রাম্পের অনুষ্ঠান ছিল ইতিহাসনির্ভর- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্যাঙ্ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পোশাকে সৈন্যরা হোয়াইট হাউসের কাছে কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে যান। এই বৈপরীত্য ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের সাথে মিলে যায়, যেখানে তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বাণিজ্যনীতি (মার্কেন্টাইলিজম)-এ ফিরে যাওয়াকে আমেরিকার স্বর্ণযুগ বলে মনে করেন।
অ্যান্থনি জারচার আরও লিখেছেন, অন্যদিকে চীনের কুচকাওয়াজ ভবিষ্যতমুখী অস্ত্রশস্ত্রে ভরপুর হলেও এর মধ্যে ইতিহাসও ছিল- বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের বড় ভূমিকার দাবি তুলে ধরা। যদি সেই যুদ্ধ ‘আমেরিকান শতাব্দী’র সূচনা করে থাকে, তবে বেইজিং আশা করছে তাদের ভূমিকাকে সম্মান জানালে ‘চীনা ভবিষ্যৎ’ সহজ হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক ভেটেরেনস অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি রিচার্ড উইলকি বলেন, এটি মূলত ইতিহাস নতুনভাবে লেখার প্রচেষ্টা। আর আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন নতুনভাবে লেখার প্রথম ধাপই হলো ইতিহাসকে পুনর্লিখন। চীনের কুচকাওয়াজ ছাড়াও এ সপ্তাহে আরও এক দৃশ্য ওয়াশিংটনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সোমবার তিয়ানজিনে অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হয়। ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে চীন ও ভারতের মধ্যে যে টানাপোড়েন ছিল তা অনেকটাই কমে আসছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বাণিজ্যনীতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যে নাড়া দিয়েছে। চীন-রাশিয়া-ভারতের নতুন ঘনিষ্ঠতা দেখাচ্ছে যে ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র নতুনভাবে আঁকা হচ্ছে। ট্রাম্পের মতে, শুল্ক আরোপ করা মার্কিন শিল্প রক্ষা ও সরকারকে নতুন রাজস্ব আনার উপায়। কিন্তু কূটনৈতিক মূল্য থাকলেও আপাতত সেটি দিতে তিনি প্রস্তুত।
তবে ঝুঁকি বড়। শুক্রবার এক মার্কিন আপিল আদালত রায় দিয়েছে, ট্রাম্পের বহু শুল্ক আসলে আইনের ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। যদিও আদালত প্রায়ই তার পক্ষে রায় দেয়, তারা কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া প্রেসিডেন্টের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগে সতর্ক। তাই জয়ী হবেন তার নিশ্চয়তা নেই। সবশেষে বলা যায়- ট্রাম্প বাণিজ্যে নিজস্ব ছন্দে হাঁটছেন। তিনি আমেরিকাকে নাটকীয়ভাবে নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছেন, নতুন আন্তর্জাতিক মিত্রও তৈরি করছেন। তার প্রতিশ্রুতি- এটি দ্বিতীয় এক আমেরিকান স্বর্ণযুগ আনবে। কিন্তু ঝুঁকিও বাস্তব, হোক তা তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের কুচকাওয়াজে কিংবা মার্কিন আদালতের ভেতরে।

No comments