মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তার জানাজায় হেডস্কার্ফ পরায় আমেরিকায় রাজনৈতিক বিতর্ক
গভর্নর হোকুলও সেই প্রথা মেনে মাথায় কালো ওড়না পরেন। একজন বেনামী ব্যবহারকারী সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে অশালীন ভাষায় প্রশ্ন তোলে, কেন হোকুল ‘হিজাব’ পরেছেন। পরে সেই পোস্ট শেয়ার করে সিনেটর টেড ক্রুজ বিদ্রূপ করে লেখেন, ‘কি হচ্ছে এসব?’
হোকুলের জবাব ছিল স্পষ্ট, ‘‘একজন শহীদ মুসলিম কর্মকর্তার ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান জানানোই হল ‘একজন নেতা ও ন্যূনতম মানবিকতা সম্পন্ন মানুষের কাজ।”
ছবিতে দেখা যায়, গভর্নর হোকুল ও মেয়র এরিক অ্যাডামস মসজিদের ভেতরে জানাজায় অংশ নিচ্ছেন। পাশে বসা পুরুষরা কেউ ইউনিফর্মে, কেউবা ধর্মীয় পাশাকে। গভর্নর হোকুলের মাথায় ছিল কালো ওড়না, মুখে গম্ভীরতা।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটির মিডমানহাটানে গণগুলিতে নিহত ৫ জনের অন্যতম দিদারুল ইসলাম, ৩৬ বছর বয়সী এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। হামলার সময় তিনি অতিরিক্ত শিফটে ছিলেন এবং নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় পুলিশ বাহিনীর বাংলাদেশি সদস্যদের একজন ছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্ক সিটি এবং এনওয়াইপিডি তার জানাজা অভূতপূর্বভাবে আয়োজন করে যা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলে এবং সেখানে নারীদের ও পুরুষদের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ ছিল। অনেক নারী ও পুরুষ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মাথা ঢেকে অংশগ্রহণ করেন।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশও হেডস্কার্ফ পরে বক্তব্য রাখেন। মসজিদের বাইরে শতাধিক নারী পুলিশ কর্মকর্তারা মাথা ঢেকে জানাজায় অংশ নিতে অপেক্ষা করছিলেন।
এ বিষয়ে শনিবার, আমেরিকায় মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন কাউন্সিল অব ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) এক বিবৃতিতে সিনেটর ক্রুজের মন্তব্যকে ‘ঘৃণ্য ও অসম্মানজনক’ বলে নিন্দা জানায় এবং গভর্নর হোকুল ও অফিসার ইসলামের পরিবারের কাছে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতে টেড ক্রুজ নিজেও একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে টুপি পরে অংশ নিয়েছিলেন, তাই হোকুলের প্রতি তার সমালোচনাকে তারা ‘দ্বিচারিতা ও বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে মনে করে।
তবে রোববার সিনেটর ক্রুজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গভর্নর হোকূলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আপনার তো প্রতিদিন হিজাব পরা উচিত, কারণ আপনি এতটাই ‘ভদ্র’।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, গভর্নর হোকুল নারীদের অধিকার রক্ষায় উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। গভর্নর হোকুল টেড ক্রুজের মন্তব্যের জবাবে কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘তার কাছে মাথা ঢেকে জানাজায় অংশ নেওয়া ছিল শহীদ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক কাজ।’
উল্লেখ্য, শহীদ ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলামের জানাজায় নিউ ইয়র্ক ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের ইমাম ড. জাকির আহমেদ বলেছিলেন, ‘এই শহর, এই জাতির প্রতি আমাদের বার্তা হলো—আপনারা আমাদের সেবা নিতে এবং একই সঙ্গে আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে পারেন না। আপনারা আমাদের আত্মত্যাগ গ্রহণ করতে এবং একইসঙ্গে আমাদের কষ্টকে উপেক্ষাও করতে পারেন না।’ তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘‘ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলাম এমন এক সময়ে জীবন কাটিয়েছেন, যখন তার মতো মানুষদের অপমানিত করা হয়েছে এবং “বহিরাগত হিসেবে অনুভব করতে বাধ্য করা হয়েছে।’’
ডিটেকটিভ দিদারুল ইসলামের জানাজার সপ্তাহ না যেতেই তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে রাজনীতির বিষয়ে পরিণত করা এবং তার ধর্মীয় রীতিকে নিয়ে রাজনৈতিক কটাক্ষ করার মাধ্যমে মূলত তার আমেরিকান পরিচিতিকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে প্রমাণ করারই একটি ঘৃণ্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন নিউইয়র্কের সাধারণ মুসলিমরা।

No comments