ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় আরও ৫ সাংবাদিক নিহত
গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আজ হাসপাতালে হামলার তথ্য জানিয়েছেন। নিহত পাঁচ সাংবাদিক হলেন রয়টার্সের সংবাদিক হুসাম আল-মাসরি, আল-জাজিরার সংবাদিক মোহাম্মদ সালামা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মরিয়ম আবু দাগা, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আহমেদ আবু আজিজ ও ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহা।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ২২ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি। সবশেষ চলতি মাসেই গাজা নগরীতে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন।
আজ আল-নাসের হাসপাতালে হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, হামলার ঘটনা যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ। সংঘাতে জড়িত নয়, এমন কোনো ব্যক্তি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে জন্য তারা দুঃখিত।
ইসরায়েলের হামলায় নিজেদের সংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আল-জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, সত্যের কণ্ঠ রোধ করার পরিকল্পিত অভিযানের অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরেক বিবৃতিতে রয়টার্স বলেছে, সংবাদকর্মী হুসাম আল-মাসরির মৃত্যুতে তারা ‘বিপর্যস্ত’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয় প্রায় আড়াই শ জনকে। সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
এ ছাড়া ৬ আগস্ট থেকে গাজা নগরী দখলে শুরু করা ইসরায়েলের অভিযানে ১ হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে উপত্যকাটির সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, নগরীর জেইতুন ও সাবরা এলাকায় হামলায় চালিয়ে এ ভবনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন।
নেতানিয়াহুর কৌশল বদল
সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ওই প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় বন্দী থাকা ইসরায়েলের অর্ধেক জিম্মি মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। গাজায় বর্তমানে জীবিত ও মৃত মিলে ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন। এ প্রস্তাবের সঙ্গে গত মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার মিল রয়েছে।
উইটকফের ওই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল হামাস। যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীরা এরপর ইসরায়েলের কাছ থেকে জবাব আশা করছিল। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু বলেন, তিনি গাজা থেকে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার এবং সংঘাত পুরোপুরি শেষ করার আলোচনা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বর্তমানে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
একই সময়ে গাজা নগরী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য ব্যাপক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এটিও নেতানিয়াহুর কৌশলের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। সিএনএনকে তাঁরা বলেছেন, গাজায় নতুন করে ব্যাপক সামরিক চাপের হুমকি সংঘাত বন্ধের জন্য ইসরায়েলের শর্তগুলো মেনে নিতে হামাসকে আরও নমনীয় করে তুলবে। এতে গাজায় ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে।
ইসরায়েলি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, গাজা নিয়ে নেতানিয়াহুর নতুন কৌশল জেরুজালেম নয়; বরং ওয়াশিংটন থেকে এসেছে। বিগত কয়েক সপ্তাহে গাজা নগরীতে ইসরায়েলের অভিযানের বারবার সমর্থন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব তাঁর প্রশাসন দিয়েছে, তার বিপরীতে গিয়ে যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলের কথা বলছেন তিনি।
গত সপ্তাহে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘হামাসকে যখন মোকাবিলা করা হবে এবং নির্মূল করা হবে, তখনই বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে পারব আমরা। এটা যত দ্রুত করা হবে, সফলতার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।’
![]() |
| ডানে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহা। তিনি ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বিদেশের কিছু গণমাধ্যমের জন্য কাজ করতেন। তাঁর পাশেই মরিয়ম আবু দাগা। তিনি এপির ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ছিলেন। ইসরায়েলের হামলায় আজ দুজনেই নিহত হন। ছবি: এএফপি |

No comments