ইসরাইলে লাখো মানুষের বিক্ষোভ: সরকারের স্বার্থ রক্ষায় কেন জিম্মিদের বলি দেব?

ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায়। সরকারের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ও হামাস সমর্থিত সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের মাঝেই তারা পথে নেমেছেন। তাদের দাবি জিম্মিদের মুক্তির জন্য অবিলম্বে চুক্তি করতে হবে। তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে সাপ্তাহিক সমাবেশে অপহৃত যমজ গালি ও জিভ বারমানের ভাই লিরান বারমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী জিম্মিদের বলি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ৪২ জন জিম্মিকে গাজায় জীবিত নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের মৃতদেহ ফিরেছে। তাদের বাঁচানো যেত। আমি চাই না আমার পরিবার ৪৩তম শোকার্ত পরিবার হোক।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইল রাষ্ট্র এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা কি জিম্মিদের আশা ছেড়ে দেব এবং তাদেরকে কি ক্ষমতাসীন জোটের স্বার্থ রক্ষার জন্য বলি দেব? আমি এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি- অপেক্ষা করবেন না, এগিয়ে যান। তাদের ফিরিয়ে আনুন- সবাইকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন হারেৎজ।

অপহৃত সেনা মাতান আংগ্রেস্টের পিতা হাগাই আংগ্রেস্ট বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করতে হবে যেন তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি উপস্থাপন করেন। ৭ অক্টোবরে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আলন শিমরিজের ভাই ইয়োনাতান শিমরিজ গাজায় আইডিএফ-এর গুলিতে নিহত হন। শিমরিজ বলেন, যখন আলন নিহত হল, তারা আমাদের বলেছিল যুদ্ধ ও সামরিক চাপ জিম্মিদের ফিরিয়ে আনবে। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সামরিক চাপ জিম্মিদের মেরে ফেলে। এটা কোনো স্লোগান নয়, এটাই বাস্তবতা। তামির আদারের মৃতদেহ এখনো গাজায় আটকে আছে। তার বোন রনি আদার বলেন, দিন, জিম্মি, হতাশার প্রহর গুনতে গুনতে আমি ক্লান্ত। যদি নাগরিকদেরই না বাঁচাতে পারে তাহলে রাষ্ট্রের কাজ কী? তেল আবিবে বেগিন গেটেও বিক্ষোভে লোকজন রাস্তায় আগুন জ্বালায়।

নিহত জিম্মি আব্রাহাম মুন্ডারের আত্মীয় মানো মোর বলেন, সামরিক চাপ জিম্মিদের কফিনে ফিরিয়ে আনে এই কথাটাই আজকের বাস্তবতার সঙ্গে বেশি মানানসই। তিনি আরও বলেন, তাদের মৃত্যু বৃথা গেছে, কোনো সামরিক উদ্দেশ্যও পূরণ করেনি। নেতানিয়াহু তাদের নিজের ক্ষমতার জন্য বলি দিয়েছেন। আলোচনার টেবিলে চুক্তি ছিল, কিন্তু তিনিই তা আটকে রেখেছেন। জেরুজালেম ও হাইফাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাইফায় টম ৭ অক্টোবর কিবুতজ কিসুফিমে আইডিএফের গুলিতে নিহত হন। তার পিতা ইয়াকভ গডো বলেন, যে যুদ্ধাপরাধ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, সেই একই অপরাধ গাজায় চলেছে। অসংখ্য জিম্মি বোমা হামলায় নিহত হয়েছে, নিরীহ বেসামরিকদের গণহত্যা হয়েছে, গাজা সিটি দখল হয়েছে, জীবিত জিম্মিদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

প্রতিবাদের আগে জিম্মিদের পরিবারগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজা দখলের পরিকল্পনা হলে আলোচনা ভেঙে পড়বে। মাতান নামের এক জিম্মির মা আইনাভ জাঙ্গাউকার বলেন, যদি গাজা দখল শুরু হয়, কোনো চুক্তি হবে না। দখল মানে আলোচনা শেষ, আর জিম্মি ও সেনাদের মৃত্যু।

অন্য এক জিম্মি নিমরোদের পিতা ইয়েহুদা কোহেন বলেন, নেতানিয়াহু জনগণকে ভুল বুঝাচ্ছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, শুধু আপনিই বিবিকে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করতে পারেন। সময় এখনই। ইতজিক হর্নের ছেলে এতান এখনো বন্দি। তিনি বলেন, যুদ্ধ ইতিমধ্যেই সামরিক লক্ষ্য পূরণ করেছে। সরকার এখন উগ্রপন্থিদের হাতে। তারা আমাদের সন্তানদের মেসিয়ানিক কল্পনার জন্য বলি দিতে চায়। আমি ইসরাইলের জনগণের কাছে আবেদন করছি, আপনারাই আমাদের আশা। শনিবার উত্তরের বিভিন্ন মোড়ে, যেমন হাগোমা, নাহালাল ও কারকুর সংযোগস্থলে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবারের জন্য হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম একটি জাতীয় সংগ্রামের দিন ঘোষণা করেছে। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.