শান্তি অধরাই, রাশিয়ার ওপর আবারও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকি
এতে বলা হয়, ট্রাম্প অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ইউক্রেনে একটি মার্কিন কারখানায় রুশ হামলার পর। ওই হামলায় সেখানে আগুন ধরে কয়েকজন কর্মচারী আহত হন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার বলেন, রাশিয়া তার ও পুতিনের বৈঠক ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, আলাস্কার বৈঠকের পর সোমবার পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপেই তিনি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করেন। জেলেনস্কি বারবার পুতিনকে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন, বলেছেন যুদ্ধ শেষ করতে এটিই একমাত্র উপায়। কিন্তু রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এনবিসিকে বলেন, কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। পুতিন প্রস্তুত আছেন যখন আলোচনার এজেন্ডা তৈরি হবে- কিন্তু এ মুহূর্তে তা মোটেই প্রস্তুত নয়।
এটি ট্রাম্পের জন্য বড় ধাক্কা। তিনি পুরো সপ্তাহজুড়ে শান্তি প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিক অগ্রগতির দাবি করেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের দেখানো ছবিতে ট্রাম্প আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে লাল কার্পেটে সাক্ষাৎ দেখান এবং জানান, পুতিন ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় ফুটবল বিশ্বকাপে আসতে চান। ট্রাম্প বলেন, আমি এটা তার জন্য সই করব। তিনি হয়তো আসবেন, আবার নাও আসতে পারেন- সবকিছু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে ট্রাম্প উল্লেখ করেননি যে, ইউক্রেন আক্রমণের পর ২০২২ সালে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তারা ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও অংশ নেয়নি।
শুক্রবার একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সফরে গিয়ে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সামনের সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আলাস্কায় আমাদের খুবই ভালো, অর্থবহ ও খোলামেলা বৈঠক হয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ আমেরিকার নেতৃত্বের হাতে। তবে আমি বর্তমান প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বগুণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। পুতিনের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের স্পষ্ট কোনো অগ্রগতি না হলেও রাশিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত ও ব্যবসায়িক চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী। ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর থেকে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, দুই পক্ষে মিলিয়ে ১০ লাখেরও বেশি সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন। যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং উভয় পক্ষই জ্বালানি স্থাপনা আক্রমণ করছে।
রাশিয়া দাবি করছে, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলের দুটি অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণের আরও দুটি অঞ্চলে ফ্রন্টলাইন স্থির করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা মস্কো নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে। কিছু দখলকৃত এলাকা ফেরত দেওয়ার কথাও ইঙ্গিত দিয়েছে। জেলেনস্কি ইতিমধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত তুলে নিয়েছেন, যদিও আগে বলেছিলেন বন্দুকের নল উঁচিয়ে ধরে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া বৈঠক এড়াতে চাইছে এবং আক্রমণ অব্যাহত রাখতে চায়। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের জন্য কিছু পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা মেনে নিয়েছে। তবে পরে ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়াকে বাদ দিয়ে এসব আলোচনা করা অর্থহীন।
জেলেনস্কি পাল্টা বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার হুমকি কোথা থেকে আসছে আমি জানি না। আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি চাই, যাতে ভবিষ্যতে রুশ আক্রমণ ঠেকানো যায়।

No comments