গাজা সিটিতে হাহাকার, আরও ৪৭ নিহত

গাজা সিটিতে হাহাকার। বিশৃংখলা। মানুষ বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। গাজাবাসীর ওপর নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। কমপক্ষে আরও ৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। এর মধ্যে ৪৭ জন উত্তর গাজা সিটিতে। সামরিক বাহিনী শহরটি দখল করতে এবং সেখানে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করতে তাদের অভিযান আরও জোরদার করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। শনিবার নিহতদের মধ্যে আছেন ১১ জন ফিলিস্তিনি, যাদের খাদ্য সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টির কারণে আরও ১০ জন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে। গাজা সিটিতে ইসরাইলি বাহিনী টানা তিনটি হামলা চালায়। এতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়েছে। কমপক্ষে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুও রয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানিয়েছেন, এ হামলায় চারপাশে ‘হাহাকার ও বিশৃঙ্খলা’ তৈরি হয়। তিনি বলেন, অনেক শিশু আহত হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ রক্তে ভিজে হাসপাতালে পৌঁছেছে। আমরা দেখেছি এক শিশুর পিঠে আহত অন্যদের মাংস লেগে আছে।

মাহমুদ আরও বলেন, ইসরাইল গাজা সিটিকে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করার পর এটি ছিল সর্বশেষ হামলা।  সামরিক বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হামলা বাড়িয়েছে, যা মানুষকে আরও উচ্ছেদ হতে বাধ্য করছে। আমরা দেখছি মানুষ আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে। ইসরাইলি হামলা থেকে পালিয়ে পরিবারগুলো নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে এবং মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় নির্মম করুণ পরিস্থিতিতে অস্থায়ী তাঁবু গড়ে তুলছে। তাদের অধিকাংশই ইতিমধ্যেই একাধিকবার ঘরছাড়া হয়েছেন। ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মালুফ এপি’কে বলেন, তিনি ও তার নয় সদস্যের পরিবারকে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি কী বলব? কুকুরের মতো? আমরা কুকুর নই। কুকুরকে আমাদের চেয়ে ভালোভাবে রাখা হয়। আমাদের কোনো ঘর নেই। আমরা রাস্তায়।  ভারী ইসরাইলি হামলা উত্তর গাজার জাবালিয়াকেও টার্গেট করেছে। এতে সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা আল জাজিরাকে বলেন, তিনি জাবালিয়া থেকে পালিয়ে গাজা সিটির পশ্চিম দিকে যাচ্ছেন। তবে ঠিক কোথায় যাবেন তা জানেন না।

তিনি বলেন, আমাদের এলাকা ছেড়েছি। কারণ সেখানে অবস্থা ভয়াবহ। আশা করছি একটা জায়গা পাব তাঁবু বসানোর জন্য। এখানে সবকিছুই নিরর্থক। আর কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। ইসরাইলিরা সর্বত্র হামলা করছে। ইসরাইলি বাহিনী আগস্টের শুরু থেকে গাজা সিটিতে ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে শহরটি দখল করার ও প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে। শুক্রবার ইসরাইলি সেনারা জানায়, তারা আক্রমণের প্রাথমিক ধাপ শুরু করেছে এবং গাজার সবচেয়ে বড় শহরটিকে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করেছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মিরজানা স্পোলজারিক এগার ইসরাইলের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, গাজা সিটির গণউচ্ছেদ অকল্পনীয় ও অবাস্তব। তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজা সিটির গণউচ্ছেদ নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্ভব নয়। এটি বিশাল জনপদ স্থানান্তরের দিকে ঠেলে দেবে, যা গাজা উপত্যকার কোথাও সামলানো সম্ভব নয়। কারণ বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস আর খাদ্য, পানি, আশ্রয় ও চিকিৎসার মারাত্মক সংকট রয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, এই ব্যক্তি হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ছবিটি প্রকাশ করে
প্রথম আলোঃ গাজায় হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার হামাসের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। গত মে মাসে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তাদের সেনা অভিযানে মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। যদিও তখন এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে হামাসের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। ওই ঘটনার কয়েক মাস পর এখন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদ সিনওয়ারের নিহত হওয়ার খবর জানাল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি তারা। শুধু আরও কয়েকজন কমান্ডারের সঙ্গে মোহাম্মদ সিনওয়ারের একটি ছবি প্রকাশ করে তাঁদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘শহীদ’। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৪ সালের অক্টোবরে গাজার রাফায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
# ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, এই ব্যক্তি হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ছবিটি প্রকাশ করে। ছবি: রয়টার্স



No comments

Powered by Blogger.