আল-আকসায় ইসরাইলি মন্ত্রীর প্রার্থনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা উসকে দিয়েছে

ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়কমন্ত্রী ইতামার বেন-গভির জেরুজালেমের একটি পবিত্র স্থানে প্রকাশ্যে ইহুদিদের প্রার্থনায় অংশ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলেছেন। মুসলিমদের কাছে হারাম আল-শরিফ (আল-আকসা প্রাঙ্গণ) এবং ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত এ স্থানে দশকের পর দশক ধরে চলা এক চুক্তিকে লঙ্ঘন করেছেন তিনি। ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বেন-গভির ইহুদিদের প্রার্থনার নেতৃত্ব দিচ্ছে, যদিও ঐতিহাসিক ‘স্ট্যাটাস ক্যু’ অনুযায়ী, ইহুদিদের এ স্থান পরিদর্শনের অনুমতি থাকলেও প্রার্থনার অনুমতি নেই। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং মুসলমানদের উপাসনার অধিকার সংরক্ষিত আছে। ঐতিহাসিকভাবে এ স্থানটির তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় রয়েছে জর্ডান। বেন-গভিরের এই পদক্ষেপকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে আখ্যা দিয়েছে জর্ডান। হামাস বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনের গভীরতা আরও বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র বলেছেন, এই সফর সকল রকমের সীমা অতিক্রম করেছে। এই স্থানটি মুসলমানদের জন্য তৃতীয় পবিত্রতম এবং ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এখান থেকেই মহানবী মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন। অন্যদিকে, ইহুদি ধর্ম মতে, এখানেই প্রাচীন দুটি বাইবেলিক উপাসনালয় (টেম্পল) অবস্থিত ছিল। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরাইল জর্ডানের কাছ থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। পরে চুক্তি অনুযায়ী, জর্ডানকে এই পবিত্র স্থানটির ধর্মীয় তত্ত্বাবধায়কের মর্যাদা দেয়া হয়। আর ইসরাইল নিয়ন্ত্রণ রাখে নিরাপত্তা ও প্রবেশাধিকার। তবে ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করে আসছে, ইসরাইল সময়ের সাথে সাথে ‘স্ট্যাটাস ক্যু’ চুক্তি ভাঙছে এবং ইহুদি পর্যটকরা প্রার্থনা করলেও তাদের থামায় না পুলিশ। ওয়াকফ- যেটি ইসলামিক এনডোমেন্ট হিসেবে স্থানটি পরিচালনা করে- জানিয়েছে, রোববার সকালে বেন-গভিরসহ ১২৫০ জন ইহুদি এই প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।

টাইমস অব ইসরাইলের তথ্যমতে, বেন-গভির আগেও এখানে এসেছে। কিন্তু এবারই প্রথম প্রকাশ্যে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছে। তিনি পুলিশের পাহারায় পুরো প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে দেয়া বিবৃতিতে বেন-গভির বলেছে, হামাস সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের যে ‘ভয়াবহ’ ভিডিও প্রকাশ করেছে, তা ইসরাইলের ওপর চাপ তৈরির কৌশল। তিনি আবারও দাবি করেন, গাজা উপত্যকার পুরো অংশ দখল করে নিতে হবে এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছা প্রস্থান উৎসাহিত করতে হবে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে সাধারণ মানুষের জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির সমান, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.