‘আমরা গোটা বিশ্বের চোখের সামনে মরছি’
দেইর আল-বালাহর আল-আকসা মারটায়ারস হাসপাতালে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মেঝেতে শিশু ও অন্য মানুষদের মরদেহ পড়ে আছে। চিকিৎসকেরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবিক সহায়তা সংস্থা প্রজেক্ট হোপ এই ক্লিনিক চালায়। সংস্থাটি বলেছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ‘হামাসের এক সন্ত্রাসী’কে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। হামলায় সাধারণ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়ায় তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। যদিও এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
প্রজেক্ট হোপ বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালে দেইর আল-বালাহর আলতাইয়ারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে হামলা হয়। তখন অনেকে ক্লিনিক খোলার জন্য বাইরে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তারা অপুষ্টি, সংক্রমণ, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।
ইউসুফ আল-আইদি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেন, ‘হঠাৎ ড্রোনের শব্দ শুনতে পেলাম, তারপরই বিস্ফোরণ। পায়ের নিচে মাটি কেঁপে উঠল; আর চারপাশ একমুহূর্তেই রক্তে ভরে গেল। অনেক চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলার ঠিক পরপরই রাস্তার ওপর প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ছোট ছোট শিশু পড়ে আছে। তাদের কেউ গুরুতর আহত, আবার কেউ একদম নড়াচড়া করছে না। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি।
পাশের আল-আকসা হাসপাতালের মর্গে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
এক নারী বিবিসিকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা ভাগনি মানাল এবং মানালের মেয়ে ফাতিমাও আছে। মানালের ছেলে এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
ইন্তেসার বলেন, ‘ঘটনার সময় মানাল শিশুদের জন্য পুষ্টিসামগ্রী নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল।’
আরেকজন নারী পাশ থেকে বলে ওঠেন, ‘তাদের কী অপরাধে হত্যা করা হলো?’
ইন্তেসার আরও বলেন, ‘আমরা গোটা বিশ্বের চোখের সামনে মরছি। সারা বিশ্ব গাজার ওপর নজর রাখছে। যাঁরা ইসরায়েলি সেনাদের হাতে মারা যাচ্ছেন না, তাঁরা সহায়তা নিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।’
প্রজেক্ট হোপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাবিহ টোরবে বলেন, তাঁদের পরিচালনাধীন ক্লিনিকগুলো গাজার শরণার্থীদের আশ্রয়ের জায়গা। সেখানে মানুষ তাঁদের ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে আসেন। নারীরা গর্ভাবস্থায় ও প্রসব–পরবর্তী যত্ন পায়। সেখানে অপুষ্টি ও অন্যান্য অসুস্থতার চিকিৎসা পাওয়া যায়।
রাবিহ টোরবে আরও বলেন, ‘তবুও আজ সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লিনিক খোলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা নিরীহ পরিবারগুলোর ওপর নির্দয় হামলা হয়েছে। আমরা এখন আর হতভম্ব আর হৃদয়বিদারক শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না।’
টোরবের মতে, এটা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় কেউ বা কোনো জায়গা নিরাপদ নয়।
ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘জীবন রক্ষাকারী সাহায্য পেতে চাওয়া পরিবারের ওপর এই হত্যাকাণ্ড একেবারেই অসহনীয়।’
- বিবিসি
![]() |
| দেইর আল-বালাহর আল-আকসা মারটায়ারস হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: এএফপি |

No comments