তীব্র ক্ষুধায় জ্ঞান হারাচ্ছেন গাজার ত্রাণকর্মীরা, থমকে আছে যুদ্ধবিরতি আলোচনা
এতে বলা হয়, গত চারদিনে অনাহারে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থা এই সংকটের জন্য মূলত ইসরাইলি অবরোধকেই দায়ী করছে। দেশটি গাজায় ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে।
লাজারিনি আরও বলেন, তার এক সহকর্মী গাজা থেকে তাকে বলেছেন, গাজার মানুষ জীবিতও নয়, মৃতও নয়- তারা জীবন্ত লাশ মাত্র। ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, জর্ডান ও মিশর সীমান্তে প্রায় ৬ হাজার ট্রাক সমপরিমাণ ত্রাণ ও ওষুধ গাজায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। লাজারিনি ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন ত্রাণ সহায়তা নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। সম্প্রতি এমন সব মর্মান্তিক ছবি প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে অনাহারে জীর্ন দেহ রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উপত্যকাটির চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার অনাহারে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা অসুস্থ ছিলেন এবং কয়েকদিন ধরে একদম কিছুই খেতে পায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি বড় ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তার দেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই শান্তির পক্ষে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতি অবিচল থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেব।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দোহায় চলমান শান্তি আলোচনা থেকে প্রতিনিধি দল ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, হামাস আলোচনায় সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না, তাই আলোচক দলকে পরামর্শের জন্য ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন বিকল্প উপায় বিবেচনা করছে যাতে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়-যদিও সে বিকল্প কী, তা তিনি খোলাসা করেননি।
এর আগে হামাস নতুন একটি প্রস্তাব পাঠায়, যা নিয়ে আশার সুর শোনা যাচ্ছিল। এমনকি বার্তা সংস্থা এপি’র এক খবরে বলা হয়, ইসরাইলের এক কর্মকর্তা ওই প্রস্তাবকে কার্যকরযোগ্য বলেও অভিহিত করেছিলেন। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নতুন প্রস্তাবে বন্দী বিনিময়ের সংখ্যা, গাজায় কোন সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করবে এবং যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। রয়টার্সকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি সহনশীল, ইতিবাচক এবং গাজার মানুষদের দুর্ভোগ হ্রাসের বিবেচনায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইসরাইলে জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন হোস্টেজ ফ্যামিলিজ ফোরাম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, প্রতিদিন দেরি হওয়া মানেই জিম্মিদের জীবন আরও বিপন্ন হওয়া। তাদের অবস্থান জানার বা উদ্ধার করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান আলোচনার ভিত্তিতে যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা ছিল, তাতে ৬০ দিন যুদ্ধবিরতি থাকবে এবং এর মধ্যে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে। এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে আছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)- এটি একটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু মাত্র চারটি বিতরণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারী নিরাপত্তার মধ্যে তারা ত্রাণ বিতরণ করছে, যেটিকে মানবিক সংগঠনগুলো মৃত্যুকূপ বলে অভিহিত করছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে হাজারের বেশি ত্রাণপ্রার্থী ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ইসরাইল মার্চ থেকে জাতিসংঘের ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, জাতিসংঘের ত্রাণ চুরি করেছে হামাস। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এখন হামাসের মূল দাবি হচ্ছে, জাতিসংঘের ত্রাণ ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে একে অন্তর্ভুক্ত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস গাজার দুর্ভিক্ষকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন।
গাজায় অনাহারে শিশুদেরে মৃত্যুর ছবি হাতে নিয়ে বুধবার হাজারো ইসরাইলি রাজধানী তেলআবিবে বিক্ষোভ করেছে। তারা গাজা অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। হামাস চায় চূড়ান্ত চুক্তিতে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান নিশ্চিত করা হোক, কিন্তু ইসরাইল তাতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা এই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতির পর আবার হামলা শুরুর পথ খোলা রাখতেই চাইছে।

No comments