গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল

ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। উপত্যকাটিতে প্রায় ২২ মাস ধরে চলা সংঘাতের সময় হত্যা করা হয়েছে এই ফিলিস্তিনিদের। নৃশংস হামলার পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে তীব্র খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেছে ইসরায়েল। এর জেরে মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষের। তাঁদের বেশির ভাগই শিশু।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ মঙ্গলবার উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ৬৬২ দিনে ৬০ হাজার ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সে হিসাবে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন ৯০ জনের বেশি। হামলা শুরুর পর থেকে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ ফিলিস্তিনি।

আজও গাজাজুড়ে তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিন সকাল থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ছয়টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। আর আগের ২৪ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন মোট ৬৩৭ জন ফিলিস্তিনি। গাজার মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ।

গাজায় নিজেদের অভিযানের লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা বলে দাবি ইসরায়েলের। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত প্রায় সবাই নারী, শিশুসহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপত্যকাটিতে ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। সোমবার ইসরায়েলভিত্তিক দুটি মানবাধিকার সংস্থাও একই কথা বলেছে।

গাজায় যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ত্রাণ

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আগের তুলনায় শিথিল করেছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির কিছু এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে হামলা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণ ফেলছে কয়েকটি দেশ। তবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) অভিযোগ, গাজায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ ত্রাণ যাচ্ছে না।

ডব্লিউএফপির পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা আঞ্চলিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক প্রকল্প উপদেষ্টা রস স্মিথ বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ ত্রাণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম, তা পাইনি। এই শতাব্দীতে এর আগে এমন কিছু দেখা যায়নি।’ ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন। অপুষ্টিতে ভোগা ৯০ হাজার নারী-শিশুর বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন।

ডব্লিউএফপির মতো একই ভাষ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি)। তারা বলছে, গাজায় প্রতি মাসে ৬২ হাজার টন খাবার প্রয়োজন। তবে ইসরায়েলের ত্রাণ সমন্বয়কারী সংস্থা সিওজিএটির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে উপত্যকাটিতে মাত্র ১৯ হাজার ৯০০ টন খাবার প্রবেশ করেছে। আর জুনে করেছে ৩৭ হাজার ৮০০ টন।

এমন পরিস্থিতিতে গাজায় প্রতিদিনই অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে ইসরায়েলের গাজা অবরোধ শুরুর পর থেকে অনাহারে অন্তত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮ জনই শিশু। বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বিগত কয়েক সপ্তাহে।

‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিকল্প নেই’

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার মধ্যে গতকাল সোমবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সম্মেলন শুরু হয়েছে। এই সম্মেলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সম্মেলনে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল-ব্যারট বলেছেন, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকার যে বৈধ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাতে সহায়তা করতে পারে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান।

সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যে নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা অসহনীয়। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে অবৈধভাবে পশ্চিম তীরকে বিচ্ছিন্ন করছে দেশটি। ইসরায়েলে এই দুই পদক্ষেপই বন্ধ করতে হবে।

এরই মধ্যে সোমবার এক চিঠিতে নেদার‌ল্যান্ডস সরকার জানিয়েছে, গাজা পরিস্থিতির নিন্দা জানাতে দেশটিতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন-গভির ও বেজালাল স্মতরিচের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার গাজা নগরীতে
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার গাজা নগরীতে। ছবি: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.