ক্যাম্প ডেভিড বৈঠকের ২৫ বছর, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কতদূর! by জোনাথন লেসওয়্যার
জেরুজালেম ছিল সবচেয়ে বড় বাধা
ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব দাবি করলেও, ইসরাইল কেবল হারাম আল-শরীফ (আল-আকসা মসজিদ এলাকা) নিয়ে সীমিত ‘কাস্টডিয়ানশিপ’ প্রস্তাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্রও শুরু থেকেই ইসরাইলি অবস্থানকেই সমর্থন করে, যা ফিলিস্তিনিদের কাছে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করে। আলোচনায় কোনো লিখিত খসড়া তৈরি না হওয়ায়, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই হয়নি। মার্কিন আলোচক রবার্ট ম্যালি পরে বলেন, এহুদ বারাকের পদ্ধতির কারণে আসলে কোনো আনুষ্ঠানিক ইসরাইলি প্রস্তাব ছিল না।
অসলো প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা ও সন্দেহ
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর ফিলিস্তিনিরা আশা করে দখলদারিত্ব কমবে। কিন্তু ২০০০ সালের মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি বাড়ে, সামরিক দমননীতি তীব্র হয়, আর শান্তি প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে যায়। ফলে আরাফাত বিশ্বাস করেন, ক্যাম্প ডেভিড ছিল ফাঁদ- যেখানে তাকে অতিরিক্ত ছাড় দিতে বাধ্য করা হবে। ফিলিস্তিনি পরামর্শক আক্রাম হানিয়েহ তার ‘ক্যাম্প ডেভিড পেপারস’-এ লিখেছেন, ‘এই বৈঠক তাড়াহুড়ো করে ডাকা হয়; ফিলিস্তিনিরা বারবার সতর্ক করে পরিস্থিতি এখনো উপযুক্ত নয়।’
ভুল প্রস্তুতি ও ব্যর্থতার পরিণতি
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ইওসি মেকেলবার্গ বলেন, সম্মেলনটির জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। বড় সমঝোতা করার আগে ছোট ছোট বিষয়ে পূর্বসম্মতি প্রয়োজন ছিল। মার্কিন আলোচক অ্যারন ডেভিড মিলারও পরে লিখেছেন, ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলন আদৌ হওয়া উচিত ছিল না। মার্কিন দলও বহু ভুল করেছে, যা যেকোনো সমঝোতাকে আটকে দেয়। ক্যাম্প ডেভিডের ব্যর্থতার পরও ২০০০ সালের শেষ দিকে কিছু অগ্রগতি হয়। ক্লিনটন প্যারামিটার নামে পরিচিত এক কাঠামোয় উভয় পক্ষ সম্মত হয় (সংরক্ষণসহ), যা জানুয়ারি ২০০১-এর তাবা সম্মেলনে এগোয়। কিন্তু ইসরাইলি নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রে তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ক্ষমতায় আসা প্রক্রিয়াটিকে থামিয়ে দেয়। পরবর্তী চার বছর তীব্র দ্বিতীয় ইন্তিফাদা চলে।
আজকের শিক্ষণীয় বিষয়
ফিলিস্তিনি-আমেরিকান লেখক রামজি বারুদ বলেন, ক্যাম্প ডেভিড ছিল মূলত ব্যর্থ হওয়ার জন্য সাজানো। অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, দমননীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা- সব মিলিয়ে এটি ছিল একপক্ষীয় আলোচনার মঞ্চ। তার মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য শিক্ষা হলো- আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের ভিত্তিতে শক্তিশালী কাঠামো ছাড়া, ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করে টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। আগামী দিনে জাতিসংঘে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে নতুন আলোচনা হতে যাচ্ছে। হয়তো এই উদ্যোগই সেই আন্তর্জাতিক কাঠামো গড়তে সাহায্য করতে পারে, যা জুলাই ২০০০-এ অনুপস্থিত ছিল।
(অনলাইন আরব নিউজ থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ)
![]() |
| ২৭ জুলাই ২০২৫ অব্যাহত বোমা হামলা। সরাসরি গুলি। ক্ষুধা। হাহাকার। আর লাশের স্তূপ গাজায়। অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে নিরীহ মানুষ। এর অর্থ গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে সতর্ক করা হয়েছে, গাজা দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনও সেটাই বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে পরিস্থিতি যা বলে, তাতে গাজায় চরম আকারে দুর্ভিক্ষ চলছে। অসংখ্য মানুষ আছেন দুই তিনদিন ধরে কিছু খান না। কারণ, খাবার পাচ্ছেন না। শিশুরা অনাহারে থাকতে থাকতে, তাদের গায়ের চামড়া হাড়ের সঙ্গে লেগে গেছে। তাদের জন্য নেই কোনো খাদ্য, শিশুখাদ্য। মায়েদের বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে। তারাই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কোথাও কিছু নেই। চারদিকে শুধু হাহাকার। একে দুর্ভিক্ষ ছাড়া কি বলা যায়! তারপরও সেখানে অব্যাহতভাবে বোমা হামলা করছে ইসরাইল। ওদিকে, গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে মাসে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) চালু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনী ও মার্কিন ভাড়াটে সেনাদের হাতে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তারা খাদ্য সংগ্রহে গিয়েছিলেন। কেবল শনিবারই খাদ্যের জন্য লাইন ধরার সময় ৪২ জন নিহত হন। গাজাবাসীর দিকে ইসরাইলি সেনারা এমনভাবে গুলি ছুড়ছে, দেখে মনে হতে পারে তারা পাখি শিকার করছে। কিন্তু তারা এ কাজ করে উল্টো সুরে কথা বলছে। তারা বলছে, যারা নিহত হয়েছেন তারা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে মারা গেছেন। |

No comments