রাশিয়াকে মোকাবিলায় মার্কিন নির্ভরশীলতা, কোন পথে ইউরোপের রাজনীতি
ওই সাক্ষাৎকারে মের্ৎস আরও বলেন, আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আমরা অতীতে ফ্রি-রাইড করেছি, এটা সত্যি। এখন আমেরিকা চাইছে আমরা আরও দায়িত্ব নিই- আর আমরা সেটা নিচ্ছিও।
ঐতিহাসিক এক মৈত্রী চুক্তি করতে বৃটেন সফর করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর। এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলা ও যুব উন্নয়ন কর্মসূচি আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মের্ৎস জানান, জার্মানি-বৃটেনের নতুন মৈত্রী চুক্তি পরস্পরের প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। যা আগে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের অংশ হিসেবে ছিল এবং এখন ন্যাটোর অংশ হিসেবেও বহাল।
দুই দেশের কোম্পানি ইতিমধ্যে টাইফুন যুদ্ধবিমান ও বক্সার সাঁজোয়া যান উৎপাদনে যৌথভাবে কাজ করছে। এখন তারা ২০০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও একত্রে কাজ করছে। শিগগিরই ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন মের্ৎস। বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন ভালো। নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। একসঙ্গে কাজ করছি। ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য ও শুল্কের মতো বিষয়গুলো সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি জানান, চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার চার দিনের মাথায় তিনি কিয়েভ সফর করেন, সেখানে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের সঙ্গে দেখা করেন।
ইউরোপের জন্য এখন রাশিয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন মের্ৎস। বলেছেন, আমরা এক বিশাল হুমকি দেখছি। এই হুমকির নাম রাশিয়া। এটা শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে না, এটা ইউরোপের শান্তি, স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর হামলা।
জার্মান নির্বাচনের আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপের মিত্রদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কথা বলেন। এতে ইউরোপ জেগে উঠেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কোনরাড অ্যাডেনাওয়ার ফাউন্ডেশনের লন্ডন অফিসের কানান আতিলগান বলেন, মিউনিখে মের্ৎসের উপলব্ধি ছিল- আমরা আমেরিকাকে হারিয়েছি, এখন নিজেদেরকেই নিজেদের রক্ষা করতে হবে। তার ওই মন্তব্যের পরেই জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস সফরের চিত্র বদলে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নেয়ার আগেই মের্ৎস জার্মান সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেন। যাতে প্রতিরক্ষা বাজেট ব্যাপকভাবে বাড়ানো যায়। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। তাই আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
বর্তমানে একত্রে কাজ করছে বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স। ‘ই থ্রি’ নামের একটি ত্রিদেশীয় জোট গড়ে তুলতে চায় তারা। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হবে। মের্ৎস বলেন, আমি এখন কিয়ের স্টারমারের খুব কাছের মানুষ, ম্যাক্রোনের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন আগামী সপ্তাহে বার্লিন সফরে যাচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
বিজয়ের রাতেই মেৎর্স মন্তব্য করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপের প্রতি প্রায় উদাসীন। এখনো সেই মন্তব্যে অটল তিনি। মের্ৎস বলেন, ট্রাম্প আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মতো স্পষ্ট বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপ থেকে মুখ ঘুরিয়ে এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। এ কারণেই ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আত্মনির্ভরতা বাড়ানো জরুরি।
আগামী ১লা আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার লক্ষ্যে ওয়াশিংটন গিয়েছেন ইইউ’র বাণিজ্য আলোচক মারোস শেফচোভিচ। মের্ৎস বলেন, উচ্চ শুল্ক জার্মান রপ্তানি শিল্প ধ্বংস করে দেবে। তবে আমার মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নিজেও বিষয়টি বুঝছেন এবং সমাধান চাচ্ছেন।
নতুন চুক্তিতে রয়েছে মানব পাচার রোধে জার্মান আইন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। জার্মানিতে ছোট নৌকা জমিয়ে রাখা পাচারকারীদের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। তাছাড়া লন্ডন-বার্লিন সরাসরি রেল সংযোগ, এবং শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। মের্ৎস আশা করেন, সবার আগে এই মৈত্রী চুক্তির বাস্তব ফল পাবে শিক্ষার্থীরাই। কেননা উভয় দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক তারাই নেতৃত্ব দেবে।

No comments