আহমেদাবাদ ট্র্যাজেডি: বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে উঠে আসছে যে সব প্রশ্ন, নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৪

গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মিনিট খানেকের মধ্যে কীভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ বিমানটি  ভেঙে পড়লো তা নিয়ে বিস্মিত সকলে। ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিমানের পাইলটরা ছিলেন অভিজ্ঞ। ড্রিমলাইনারটির ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং তার সহ-পাইলট ক্লাইভ কুন্ডার  সম্মিলিতভাবে ৯,০০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়ান পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল।  সাভারওয়াল  বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার পাইলট হিসেবে ২২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ফলে তাদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। ইতিমধ্যেই কীভাবে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা তদন্তে সহায়তা করতে আসছেন। তদন্তকারীরা প্রথম বোয়িং ৭৮৭-এর সঙ্গে জড়িত মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণগুলো বোঝার জন্য রাডার, সিসিটিভি এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) সহ প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। তারা সবদিক থেকে তদন্ত করছেন।

তবে  বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মিনিট খানেকের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ বিমানটি কীভাবে ভেঙে পড়লো তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিসিএ) মনে করছেন, পাখির ধাক্কায় হয়তো দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। অথচ এর আগে আরও উচ্চতা থেকে পাখির ধাক্কায় জখম বিমানকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা গেলেও এবার তা হয়নি।  বিমানের পাইলট এটিসিতে বিপদ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী উড্ডয়নের সময় কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিমান চালনায় দক্ষরা জানিয়েছেন, উড্ডয়নের পর পরই ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে তা খোলা ছিল কেন সেই প্রশ্ন
উঠেছে। তাছাড়া উড়ানে যে সময়ে গতিবেগ ১৯০-২০০ নট থাকার কথা সেখানে ১৭৪ নট ছিল কেন? তখন কি পাইলট  বিমানকে উপরের দিকে তুলছিলেন নাকি নিচে নামানোর চেষ্টা করছিলেন। এমন প্রশ্নও উঠেছে, বিমানটি কি প্রয়োজনের তুলনায় কম দৌড়ে আকাশে উঠেছিল।

দুই ইঞ্জিনের বোয়িংয়ের একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আরেকটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিমানটির উড়ে থাকার কথা। তাহলে কি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যখন আকাশে উঠেছিল তখন দুটি ইঞ্জিনেই বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গিয়েছিল? ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কের লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই বিদ্যুৎ হারিয়ে ফেলে। সেই সময় বিমানটি আরও উচ্চতায় উঠেছিল এবং পানিতে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং সমস্ত যাত্রী বেঁচে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য বোয়িং বিমানটি মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল।

কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমান নিরাপত্তা বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ফিলিপ বাউম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘সম্ভবত মনে হচ্ছে’ সিস্টেম বা একাধিক সিস্টেমের ব্যর্থতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
গরম আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি, যাত্রী এবং পণ্যসম্ভারের ভারী বোঝা নিয়ে উড়ে যাওয়া সবচেয়ে পাইলটের কাছে চ্যালেঞ্জ বলে  জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে,  উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ পাইলটরা কি এমন অবস্থায় বিমানের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এবং পদক্ষেপ নিতে পারতেন?
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, বিমানটিতে ১.২৫ লাখ লিটার জ্বালানি ছিল। পুড়েছিল সেই জ্বালানি। ফলে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেই যাত্রীদের বাঁচানো যায়নি।

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৪

গুজরাটের আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৪ জনে। এর আগে বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদ পুলিশ জানায়, কমপক্ষে ২৪০ জন নিহত হয়েছেন। যা পরর্বতীতে বেড়ে ২৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে। বিমানে থাকা ২৪২ যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হয়েছেন। আকস্মিকভাবে বেঁচে গেছেন একজন। বিমানটি চিকিৎসকদের একটি হোস্টলের উপর আছড়ে পড়ে। এতে সেখানে ৫০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই বৃটিশ নাগরিকের নাম রমেশ বিশ্বকুমার। তিনি বিমানের ১১-এ আসনে ছিলেন। রমেশ বলেছেন, এক মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল। উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডে পরই একটা বিকট শব্দ হয় এবং এর পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান রমেশ।

এদিকে  গুজরাটের স্বাস্থ্য সচিব ধনঞ্জয় দিভেদি বলেছেন, নিহতদের শনাক্তের জন্য তাদের আত্মীয়দের  ডিএনএ নমুনা দিতে বলা হয়েছে। বিমানটি যে ভবনে আছড়ে পড়েছিল সেই ভবনের চারপাশে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লেজের অংশ ভবনের উপর আটকে থাকতে দেখা গেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি একটি আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই বড় আগুনের কুণ্ডলি আকাশের দিকে উড়তে দেখা যায়। বিমানটিতে ২১৭ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। এ ছাড়া ১১ জন শিশু ও দু’টি নবজাতক ছিল। ভারতীয় ছিলেন ১৬৯ জন। বৃটিশ নাগরিক ছিলেন ৫৩ জন। সাতজন পর্তুগিজ ও একজন কানাডার নাগরিকও ছিলেন। বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। যা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক বিমান। এর আগে বোয়িংয়ের এই মডেলের বিমান কখনো বিধ্বস্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার লন্ডনের উদ্দেশ্য যাত্রা করা আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। এদিকে আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনাকে ভয়াবহ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, ভারত একটি বৃহৎ এবং শক্তিধর দেশ। আমি নিশ্চিত তারা এই পরিস্থিতি সামলে নেবে। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে আছি। ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার মধ্যে এটি একটি। ট্রাম্প আরও বলেছেন, বেশির ভাগ যাত্রীই হয়তো মারা গেছেন।

স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করে লন্ডনে দুই শিশু সন্তানের কাছে ফেরা হলো না

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় প্রিয়জনকে হারিয়েছেন এমন প্রতিটি পরিবারের এক-একটি কাহিনী সকলের চোখে পানি এনে দিচ্ছে। আমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় লন্ডন প্রবাসী অর্জুন ভাই পাটোলিয়ার মৃত্যু হয়েছে। অর্জুনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এখন লন্ডনে থাকা দুই শিশু সন্তান নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। লন্ডনে প্রয়াত স্ত্রী'র অস্থি বিসর্জন দিতে তিনি গুজরাটে এসেছিলেন। গুজরাটের আমরেলির বাসিন্দা অর্জুন ভাই পাটোলিয়া তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে লন্ডনে থাকতেন। তার স্ত্রী ভারতীবেন পাটোলিয়া গত ২৬ মে লন্ডনে প্রয়াত হন। স্ত্রী'র শেষ ইচ্ছা রাখতে চিতা-ভস্ম নিয়ে আমরেলি জেলার তার নিজ গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দিতে এসেছিলেন অর্জুন। কিন্তু অর্জুনের আর লন্ডনে মেয়েদের কাছে ফেরা হল না। স্ত্রীর চিতাভস্ম বিসর্জন দেওয়ার পর অর্জুন এয়ার ইন্ডিয়ার অভিশপ্ত বিমানে চেপে  লন্ডনে ফিরছিলেন। ওড়ার কিছু সময়ের মধ্যেই বিমান দুর্ঘটনায় অর্জুন ভাই পাটোলিয়ারের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অর্জুন ভাই পাটোলিয়ারের দুটি ছোট মেয়ে রয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর এবং অন্যজনের বয়স ৪ বছর। তারা অনাথ হয়ে পড়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.