ইসরায়েল-সমর্থিত গ্যাংয়ের ৫০ সদস্য নিহত, গাজায় গৃহযুদ্ধের শঙ্কা
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, গাজার রাফাহ অঞ্চলে মঙ্গলবার ভোরে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইয়াসের আবু শাবাবের নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। আবু শাবাব স্থানীয়ভাবে একজন অপরাধী হিসেবে পরিচিত।
ইসরায়েলের আই টোয়েন্টিফোর নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, আবু শাবাবকে হত্যার হাত থেকে বাঁচাতে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের সংঘর্ষ হয়, যাতে উভয় পক্ষের লোকজন নিহত হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, হামাসকে দুর্বল করতে তারা আবু শাবাবের গ্যাংকে অস্ত্র দিয়েছে। মানবিক সহায়তাকারীদের মতে, এই গ্যাংয়ের সদস্যরা এর আগেও জাতিসংঘের সাহায্যবাহী ট্রাক লুট করেছিল।
চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি ড্রোন হামাসের চার সদস্যকে টার্গেট করে হত্যা করে। আই টোয়েন্টিফোর এই হামলাকে- ‘ইসরায়েলের প্রথম হামলা যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আবু শাবাব মিলিশিয়াকে সহায়তা করা’ বলে উল্লেখ করে।
আবু শাবাবের গ্যাং, যা ‘অ্যান্টি-টেরর সার্ভিস’ বা ‘পপুলার ফোর্সেস’ নামে পরিচিত, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা সাহায্যবাহী কনভয় পাহারা দিতে গিয়ে এবং করাপ্ট হামাস সংস্থাগুলোর হাত থেকে ত্রাণ সামগ্রী পুনরায় বিতরণ করতে গিয়ে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবককে হারিয়েছি, যাদের মধ্যে আমাদের নেতা ইয়াসেরের আত্মীয়রাও রয়েছে।
তারা আরও জানায়, আমরা এলাকা থেকে বিস্ফোরক সরাতে গিয়ে আরও সদস্য হারিয়েছি।
ইসরায়েলি মিডিয়া ইয়েনেত জানিয়েছে, এই গ্যাং হামাসের ‘অ্যারো ইউনিট’-এর ছয় সদস্যকে হত্যা করেছে। এই ইউনিটটি ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে থাকে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের সময় আবু শাবাব গাজার একটি হামাস-নিয়ন্ত্রিত জেলে মাদক পাচারের অভিযোগে বন্দি ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসেন, তবে কীভাবে তা ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়।
বর্তমানে ইসরায়েলের অস্ত্রধারী এই গ্যাং পূর্ব রাফাহে শতাধিক সদস্য নিয়ে সক্রিয়।
গাজার সামাজিক মাধ্যমে আবু শাবাবকে ‘ইসরায়েলি এজেন্ট’ ও ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। হামাস তাকে ও তার অনুসারীদের হত্যার ঘোষণা দিয়েছে।
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যদি দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায় বিশ্বাসঘাতক ইয়াসের আবু শাবাব রক্ষা না পেত, তবে সে আজ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ত।’
তারা আরও জানায়, আমরা বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে বের করবই, যত সময়ই লাগুক না কেন। দখলদার বাহিনীর নিরাপত্তা চিরস্থায়ী নয়।
এদিকে, আবু শাবাবকে অস্ত্র দিয়ে সমর্থন করার এই পদক্ষেপ গাজাকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা (আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী) মঙ্গলবার ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের দিকে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইয়েমেনের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হামলায় ব্যবহৃত হয় একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ‘জুলফিকার’ ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বিমানবন্দরে আঘাত হানে বলে দাবি করা হয়। ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়।
এই হামলার পর বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। হুতি গোষ্ঠী জানিয়েছে, অবশিষ্ট বিমান সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলের উদ্দেশে যাত্রা স্থগিত রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরের কাছে একটি স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, স্থানটি ছিল অস্ত্র পরিবহনের ঘাঁটি।
যুদ্ধ চলতে থাকলেও হুতিরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েল অভিমুখে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এই হামলাকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি হিসেবে উল্লেখ করছে।
![]() |
| গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যরা। ছবি : সংগৃহীত |

No comments