নাম ঠিকানাসহ চিরকুট ফেলে রেখে যায় রেস্টুরেন্টে: ২০ দিন পর মায়ের কোলে শিশু তানিশা by ফাহিমা আক্তার সুমি
শিশুটির মা কহিনুর মানবজমিনকে বলেন, অনেক কষ্টে কেটেছে এতদিন। তানিশাকে পেয়ে আজ আমরা সবাই খুশি। ওর বাবা সবসময় কান্না করতো। রাত-দিন বিভিন্ন অলি-গলিতে খুঁজেছি। আমার তিন ছেলে সন্তানের পরে মেয়েটি আমার কোল জুড়ে এসেছে। কে বা কারা, কেনইবা আমার সন্তানটিকে নিয়েছিল কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঘটনার দিন সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ফুটেজে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে বাসার সামনে রাস্তায় তানিশা তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খেলছিল। ৯-১০ মিনিট পরে সেখান থেকে ভাইয়ের সঙ্গে বাসায় চলে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই ঘটে এই ঘটনা।
তানিশার ফুপাতো ভাই মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমরা শুরু থেকে খুঁজছি। র্যাব-পুলিশ আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছিল। তানিশা সুস্থ আছে। তার মায়ের কাছে আছে। মেয়েকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি তার মা। তানিশাকে নেয়ার পরে তার চুলগুলো কেটে ছোট করে দেয়া হয়েছিল। রোববার মিরপুর-১ নম্বরের একটি রেস্টুরেন্টে বোরকা পরিহিত এক নারী আসে তানিশাকে নিয়ে। সেখানে দ্বিতীয়তলায় গিয়ে বসে। তিন-চার মিনিট পর রেস্টুরেন্টের একজন স্টাফকে বলে ভাই বাচ্চাটিকে একটু দেখিয়েন আমার একজন গেস্ট আনতে যাচ্ছি। তখন তানিশা কান্নাকাটি করছিল। যাওয়ার আধাঘণ্টা পরে ওই নারী ফিরে না আসায় রেস্টুরেন্টের কর্মীরা আলোচনা করে ঘটনাটি নিয়ে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করে। এরপর দারুস সালাম থানায় খবরটি জানায় তারা। পরে তানিশাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। তানিশার পাশে রাখা ছিল নাম-ঠিকানাসহ দুটি চিরকুট।
দারুস সালাম থানা থেকে মিরপুর মডেল থানায় খবরটি জানায়। তিনি বলেন, এখনো জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারছি না। পুলিশ তাকে খুঁজছে। যেই ঘটনাটি ঘটিয়েছে সে মনে হচ্ছে বাসার আশেপাশেই আছে। পুলিশের তৎপরতা দেখে অপরাধী নিজে বাঁচতে হয়তো তানিশাকে রেখে গিয়েছে। তানিশার বাবা-মা বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তানিশা তাদের একমাত্র মেয়ে সন্তান।
মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, তানিশা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন থেকে তাকে খুঁজে পেতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। গত রোববার মিরপুর-১ নম্বর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। একটি রেস্টুরেন্টে এক নারী ফেলে রেখে যায় শিশুটিকে। ধারণা করছি শিশুটিকে কেউ লালন-পালনের জন্য চুরি করেছিল।
উল্লেখ্য, ২২শে এপ্রিল রাত ৮টা ৪০-৫৫ মিনিটের দিকে তানিশা বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। তানিশাকে ঘরে রেখে তার মা রান্না ঘরে গিয়েছিলেন। তখন তানিশার সঙ্গে ওর ছোট ভাই ছিল সে মোবাইল দেখছিল। সেখান থেকে শিশুটি তার মায়ের কাছে আসে। এ সময় তার মা তাকে ঘরে যেতে বলে। কিছুক্ষণ পরেই শিশুটির মা ঘরে গিয়ে দেখে তানিশা নেই।

No comments