জাতিসংঘের সতর্কবার্তা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা: ইসরাইলি হামলা, সাংবাদিকসহ নিহত ২

গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে অনাহারের ঝুঁকিতে। এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অঞ্চলটি পূর্ণাঙ্গ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এই তথ্য উঠে এসেছে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে (আইপিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, গাজার মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখের মধ্যে প্রায় সবাই এখন চরম খাদ্যসংকটে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ মানুষ ‘দুর্ভিক্ষ-সমতুল্য’ বিপর্যয়ের পর্যায়ে রয়েছে- যা খাদ্য নিরাপত্তার সর্বোচ্চ সতর্ক স্তর। অক্টোবর মাসের তুলনায় পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। তখন এই ‘দুর্ভিক্ষ’ স্তরে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের অবরোধ মার্চের শুরু থেকে কঠোরভাবে জারি রয়েছে। এই সময়ে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইল আবার সামরিক অভিযান শুরু করে।

আইপিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সামরিক পরিকল্পনা এবং মানবিক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ১১ই মে থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রাণহানি, অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কারণ, দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য যে শর্তগুলো পূরণ হওয়া দরকার- যেমন ২০ শতাংশ জনগণের কাছে খাবার না থাকা, শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি এবং অপুষ্টিজনিত মৃত্যুহার বৃদ্ধি- তা এখন অনেকটাই পূরণ হওয়ার পথে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালে ৬ থেকে ৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭১ হাজার জন অপুষ্টিতে ভুগবে। এর মধ্যে ১৪,১০০ জনের অবস্থা হবে চরম সংকটজনক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উপপরিচালক বেথ বেচডল বলেন, কয়েক মাসে গাজায় পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপ হয়েছে। মার্চ থেকে কঠোর অবরোধ শুরু হওয়ার পর মানবিক এবং এমনকি বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার দাবি করেন, আমরা যতটা সম্ভব বেশি ত্রাণ ঢোকানোর চেষ্টা করেছি, তাই দুর্ভিক্ষ ঘটেনি। তবে তিনি হামাসকে দায়ী করেছেন সাহায্যপণ্য চুরির জন্য। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরাইলই ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে। আইপিসি রিপোর্টটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, গাজা এখন মানবিক বিপর্যয়ের চরম প্রান্তে। অবরোধ, সংঘাত, এবং ত্রাণ বিতরণের ব্যর্থতা মিলিয়ে একটি গোটা জনগোষ্ঠী আজ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই সংকট আরও গভীরতর হবে এবং হাজার হাজার প্রাণের ঝুঁকি দেখা দেবে।

গাজার হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা, সাংবাদিকসহ নিহত ২

গাজার খান ইউনিস শহরের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে এক সাংবাদিকসহ আরও একজন নিহত হয়েছেন। ওই সাংবাদিকের নাম হাসান এসলাইহ। মঙ্গলবার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। হাসান ওই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। বার্তা সংস্থা এএফপির ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে ধোঁয়া উঠছে। উদ্ধারকর্মীরা টর্চের আলোয় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। এতে বলা হয়, আবু ঘালি নামের এক হাসপাতাল কর্মী বলেন, এখানে বেসামরিক নাগরিকদের সেবা দেয়া হয়। হাসান ‘আলম ২৪ নিউজ এজেন্সির ’ পরিচালক ছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতেও তার অবদান ছিলো। ইসরাইল অবশ্য দাবি করেছে, হাসান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্য। আরও দাবি করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে চালানো হামাসের হামলায় অংশগ্রহণ করেন হাসান। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিন, গাজা ও লেবাননে কমপক্ষে ১৭৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ওই সংখ্যা ২১৫ বলে জানিয়েছে। টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য ওই হাসপাতালটি ব্যবহার করছিলো হামাস। এদিকে বার বার হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালানোয় নিন্দা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্রমাগত হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্য করে আসছে ইসরাইল। যদিও ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাকর্মী ও রোগীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো অবৈধ। গাজার কর্মকর্তাদের মতে, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে কমপক্ষে ৩৬টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.